নিজস্ব প্রতিবেদক: বিমানের মিসরীয় এয়ারক্রাফট লিজ নেয়ার প্রক্রিয়ায় সংঘটিত অনিয়ম ও দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিমানের কাছে লিজ নেয়ার দরপত্রসহ অন্তত ১৩ ধরনের নথিপত্র চাওয়া হয়েছে। গত ২৮ মে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল বরাবর চিঠি দিয়েছে দুদকের অনুসন্ধান টিম।
দুদক কমিশনে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন ও সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারের সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়।
দুদক সূত্র শেয়ার বিজকে জানিয়েছে, লিজ নেয়ার আগে মিসরের কায়রোতে এয়ারক্রাফট দুটি পরিদর্শন ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন ক্যাপ্টেন ইশরাত আহমেদ। তিনি প্রতিনিধিদলের প্রধান ছিলেন। তার সঙ্গে আরও ছিলেন রক্ষণাবেক্ষণ উইংয়ের প্রধান প্রকৌশলী এসএ সিদ্দিক, পরিকল্পনা বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ আব্দুর রহিম ফারুকী, এসএম হানিফ, দেবেশ চৌধুরী, সাইফুল হক শাহ, গোলাম সারওয়ার, বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টারের ইএমপিঅ্যান্ডপি ম্যানেজার সাদেকুল ইসলাম ভ‚ইয়া ও কামাল উদ্দিন আহমেদ। ৯ সদস্যের এই প্রতিনিধিদল ২০১৩ সালের ৯ থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে কায়রোতে অবস্থান করেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ ও দুদকে আসা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ দুটি লিজ নিয়েছিল বিমান। ২০১৫ সালের ফেব্রæয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় বাকি ইঞ্জিনটিও। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আবার ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। পরে ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়। সেই ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। তবে সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। সে কারণে ইজিপ্ট এয়ার ও মেরামতকারী কোম্পানি উভয়কেই অর্থ দিতে হয়েছে বিমানকে। দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজের পেছনে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের ক্ষতি হয়েছে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা। দুটি উড়োজাহাজের জন্য প্রতি মাসে বিমান ১১ কোটি টাকা করে ভর্তুকি দিয়ে আসছিল। সেই দায় থেকে ২০২০ সালের মার্চে মুক্ত হয় বিমান।
গত ২৪ মার্চ সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মিসরীয় উড়োজাহাজ লিজ নেয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ দুদকের মাধ্যমে তদন্তের জন্য কার্যবিবরণীর অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠকে দুটি মিসরীয় এয়ারক্রাফট লিজ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে গঠিত সংসদীয় সাব কমিটির প্রতিবেদন, বিশেষ করে চুক্তিপত্র প্রণয়ন এবং যান্ত্রিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাকরণ টিমের কার্যক্রম ত্রæটিপূর্ণ থাকায় স্থায়ী কমিটির সুপারিশসহ এসব বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুদকে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়।
কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কাজী ফিরোজ রশীদ ও তানভীর ইমাম অংশ নেন। এরপরই তা দুদকে পাঠানো হয়।