Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 10:39 pm

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ কমিটিতে প্রস্তাব পাস

শেয়ার বিজ ডেস্ক: রোহিঙ্গা নির্যাতনের জন্য মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ কমিটিতে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। সাধারণ পরিষদের থার্ড কমিটিতে গত বৃহস্পতিবার পাস হওয়া এ প্রস্তাবে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে মিয়ানমার বিষয়ে একজন বিশেষ দূত নিয়োগ করতে বলা হয়েছে। খবর রয়টার্স।

রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভিযানের এখনই ইতি টানতে বলেছে জাতিসংঘ কমিটি। রোহিঙ্গাদের পূর্ণ অধিকার দিয়ে নাগরিকত্ব দেওয়ার আহবান ও জানানো হয়েছে পাস হওয়া প্রস্তাবে। থার্ড কমিটি রাখাইনে জাতিসংঘ প্যানেলকে অবাধে কাজ করতে দিতেও মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে।

সাধারণ পরিষদের এজেন্ডা নির্ধারণী অন্যতম ফোরাম থার্ড কমিটি মানবাধিকার লঙ্ঘন, নারী ও শিশু সুরক্ষা, আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে। সামরিক শাসনে থাকা মিয়ানমারে মানবাধিকার হরণের নিন্দা জানিয়ে গত দেড় দশক ধরে দেশটির বিরুদ্ধে প্রস্তাব গ্রহণ করে আসছিল থার্ড কমিটি। কিন্তু সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে অং সান সু চির দল ক্ষমতায় বসায় ২০১৬ সালে একই ধরনের প্রস্তাব আর গ্রহণ করা হয়নি। তখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে যুক্তি দেখানো হয়েছিল, সু চির নেতৃত্বে মিয়ানমারের পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে।

কিন্তু গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে আবার সেনা অভিযানে রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা-ধর্ষণ এবং বাড়িঘর পোড়ানো শুরু হলে বাংলাদেশে পালাতে শুরু করে রোহিঙ্গারা; এরই মধ্যে শরণার্থীর সংখ্যা ছয় লাখ ছাড়িয়েছে। এতে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে সু চিকে; তার পক্ষে থাকা ইউরোপীয় ইউনিয়নও সমালোচনা করতে ছাড়েনি।

এর মধ্যেই মুসলিম দেশগুলোর জোট ওআইসি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নতুন প্রস্তাব নিয়ে আসে, যা বৃহস্পতিবার থার্ড কমিটিতে পাস হওয়ার পর আগামী মাসে ১৯৩ সদস্যের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হবে।

থার্ড কমিটিতে ভোটাভুটিতে ১৩৫টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে  ভোট দেয়, বিপক্ষে ভোট পড়ে মাত্র ১০টি, ২৬টি দেশ ভোট দানে বিরত ছিল।

গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও  রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার দিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। তিনি নিজ দেশে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস নিশ্চিত করতে পাঁচ দফা প্রস্তাবও তুলে ধরেন।

এদিকে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মধ্যেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হত্যা-ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে গত  সোমবারই প্রতিবেদন দিয়েছিল। তার তিন দিনের মধ্যে জাতিসংঘ কমিটিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রস্তাব গৃহীত হলো।

এ প্রস্তাব পাসের ফলে মিয়ানমারের ওপর কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি না হলেও তা বৈশ্বিক চাপ আরও বাড়িয়ে তুলল। বিশ্বের অধিকাংশ দেশই রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধের জন্য মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে আসছে। রাখাইনে মিয়ানমারের  সেনা অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ বলে মনে করছে জাতিসংঘ। রাখাইনে নতুন করে যেন সেনাবাহিনীর বল প্রয়োগ না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে গত সপ্তাহে নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের প্রতি আহবান জানায়।