Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 12:38 pm

মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা বিরাট সাফল্য: প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: মিয়ানমারে নিপীড়নের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে দেশটির সঙ্গে সম্মতিপত্র স্বাক্ষরকে ‘বিরাট সাফল্য’ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল (রোববার) রাজধানীতে প্রথমবারের মতো ‘রাষ্ট্রদূত সম্মেলনের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যে কোনো সমস্যা দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ওপর জোর দেন। খবর বিডিনিউজ।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের কথা বলতে গিয়ে ১৯৯৮ সালে আলোচনার মাধ্যমে পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেন আমাকে তৃতীয় কাউকে ডাকতে হবে? গত সপ্তাহের শেষে মিয়ানমারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে একটি সম্মতিপত্রে সই করেছে। ওই চুক্তি অনুযায়ী ১৯৯২ সালে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত যৌথ ঘোষণার আলোকে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া নিজ দেশের অধিবাসীদের ফেরত নেবে মিয়ানমার। রাখাইনে দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে বিভিন্ন সময় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।’

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৯ অক্টোবর সেনা অভিযানের মুখে ৮৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আর এবার ২৫ আগস্টের পর নতুন করে বাংলাদেশে আসে সোয়া ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা।

১৯৭৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে মিয়ানমারের আরাকান থেকে রোহিঙ্গাদের চলে আসার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। কিন্তু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে অন্তত একটা সমঝোতা করতে পেরেছি, যার মাধ্যমে আমরা আশা করি অন্তত এই মিয়ানমার নাগরিকদের ফেরত পাঠাতে পারব। এবার গণহত্যা ও ধর্ষণের মতো দমন-পীড়নের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আলোচনায় সম্মত হয় মিয়ানমার।’

প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলকে সম্পৃক্ত করার দাবি থাকলেও মিয়ানমার তাতে রাজি হয়নি। অন্যদিকে নতুন চুক্তি করে প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দিয়ে এলেও বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত মিয়ানমারের চাহিদা অনুযায়ী ১৯৯২ সালের যৌথ ঘোষণার আওতায় সমঝোতায় রাজি হয়। মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু প্রতিবেশী দেশ, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমরা ভালো সদ্ভাব রেখে এ সমস্যার সমাধান করতে চাই। এটা আমাদের বিরাট সাফল্য।’

‘রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশ সমর্থন দিয়েছে, সাধুবাদ জানিয়েছে। তারা জানতে চাচ্ছেÑকী কী লাগবে। তারা সব করতে রাজি আছে। বাংলাদেশ বোধ হয় আর কোনোদিনই এত বড় কূটনৈতিক সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।’

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতে অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘ডিপ্লোমেসিতে আগে পলিটিক্যাল বিষয়টি গুরুত্ব পেত। এখন ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি চালু হয়ে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য কীভাবে সম্প্রসারণ করা যায় সেদিকে রাষ্ট্রদূতদের নজর দিতে হবে। বাংলাদেশের স্বার্থ সুরক্ষা, দেশে আরও বিনিয়োগ আনা, নতুন রফতানি বাজার সৃষ্টি, জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমস্যা সমাধানে আমাদের যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।’

বিদেশে পালিয়ে থাকা জাতির জনকের খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে। অপপ্রচার করে তারা যেন দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে না পারে। পঁচাত্তরের পর তারা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে অনেক অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছে, তারা বসে নেই। তারা বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করছে, অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেন কোনোরকম হয়রানির শিকার না হন। প্রবাসে যারা আছেন, তাদের ভালো-মন্দ দেখা ও তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, তারাই কিন্তু মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ উপার্জন করেন। তারা যে টাকা পাঠান সেটাই আমাদের রিজার্ভের বড় অংশ। আমরা যে এতগুলো কূটনৈতিক মিশন চালাচ্ছি, এর সিংহভাগ কন্ট্রিবিউশন তারাই করছেন। আমি আবারও বলব, প্রবাসী বাঙালিরা যেন হয়রানির শিকার না হন। তাদের সঙ্গে মানবিক দৃষ্টি দিয়ে আচরণ করবেন। তাদের আস্থার জায়গায় নেবেন।’

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বক্তব্য রাখেন। অন্যদের মধ্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী, এইচটি ইমাম, তৌফিক-ই-ইলাহী, ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ফারুক খান ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শসসের মবিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।