শেয়ার বিজ ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো জাতিগত নিধনযজ্ঞের দায়ে দেশটির তিনজন সেনা কর্মকর্তা ও দুটি সেনা ব্রিগেডের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। গতকাল শুক্রবার ঘোষিত ওই নিষেধাজ্ঞার কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পত্তি জব্দ করা হবে। তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। খবর রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনও নিষিদ্ধ। সেনা কর্মকর্তা ও ব্রিগেডের পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হয়েছে মিয়ানমারের বর্ডার পুলিশের একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও। এই নিষেধাজ্ঞা এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া সবচেয়ে কড়া পদক্ষেপ।
বর্তমান নিষেধাজ্ঞার তালিকায় জেনারেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা থাকলেও মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সন্ত্রাসবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের নামে শুরু হয় নিধনযজ্ঞ। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। এমন বাস্তবতায় নিধনযজ্ঞের বলি হয়ে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। আগে থেকে উপস্থিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১০ লাখে। এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে বসবাস করছে।
যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের যেসব সেনা কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন অং কি যা, খিন মং সোয়ে ও খিন হ্লাইং। নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে সেনাবাহিনীর ৩৩তম এবং ৯৯তম লাইট ইনফেন্ট্রি ডিভিশন। বর্ডার পুলিশের কর্মকর্তা থুরা সাং লিনের বিরুদ্ধেও বলবৎ হয়েছে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা।
মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘টেরোরিজম অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী সিগ্যাল মানদেলকার মিয়ানমারকে তার পূর্ববর্তী নামে সম্বোধন করে বলেছেন, ‘বার্মিজ নিরাপত্তা বাহিনী পুরো দেশজুড়ে নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংস অভিযান চালিয়েছে। বিশেষ করে জাতিগত নিধন, নির্বিচার হত্যা, যৌন সহিংসতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য ভয়াবহ মানবাধিকার হরণের মতো অপরাধ সংগঠিত করেছে তারা। এত ব্যাপক মাত্রায় মানুষকে পীড়নের সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সহিংসতার আদেশদাতা এবং তা পালনকারী ইউনিটের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো। বার্মিজ সেনাবাহিনী ও সেনা কর্মকর্তাদের তাদের কৃতকর্মের জবাবদিহিতা এবং এসব নির্মম কর্মকাণ্ড বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।