মি. বেকার’র ৮০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক: মি. বেকার এর বিরুদ্ধে ২৬৫ কোটি টাকার বিক্রয় তথ্য গোপন করার প্রমাণ পেয়েছে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ৮০ কোটি ১৬ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা। রোববার (১১ অক্টোবর) এ মামলা করা হয়। ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান চালায় ভ্যাট গোয়েন্দা। ভ্যাট ফাঁকির তথ্য থাকায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়।

## ২৬৫ কোটি টাকার বিক্রয় তথ্য গোপন করেছে মি. বেকার

## মি. বেকার এর সুইটমিট এর ভ্যাট ফাঁকি তদন্ত করা হচ্ছে

ড. মইনুল খান জানান, ২০ অক্টোবর ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল ‘মি. বেকার কেক অ্যান্ড পেস্ট্রি শপ লিমিটেড’ এর ১৬০/৪৮৫, মোকদাম আলী সরকার রোড, ধোউড়, তুরাগে অবস্থিত কারখানা কাম প্রধান কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করেন। প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাট নিবন্ধন নং: ০০০৯৬৪৬৮২ -০১০২। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত। অভিযানটি নেতৃত্ব দেন ভ্যাট গোয়েন্দার উপ-পরিচালক নাজমুন নাহার কায়সার এবং জনাব ফেরদৌসী মাহবুব।

তিনি বলেন, রাজধানীতে প্রতিষ্ঠানটির ২৯টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে, যার মাধ্যমে কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় করে থাকে। অভিযানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি কোন ধরনের হিসাব সংরক্ষণ ব্যতীত ব্যবসা পরিচালনা করছে। পরে অনুসন্ধানের স্বার্থে টঙ্গী এলাকায় তাদের নামে খোলা দুটো ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়। এতে তাদের ফিনান্সিয়াল প্রতিবেদন পাওয়া যায় এবং এগুলো পর্যালাচনায় তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্পর্কে একটি চিত্র উঠে আসে।

আরো পড়ুন-ভ্যাট দেয় না ‘মি. বেকার’, অভিযানের পর ব্যাংক হিসাব জব্দ

মইনুল খান আরও জানান, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব আসিফ জামান গত ১৮ অক্টোবর তার নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডে অবস্থিত ‘মি বেকার’ এর বিক্রয় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ভ্যাট চালান না দেয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন। তিনি ঐ স্ট্যাটাসে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের কাছে প্রতিকার চেয়ে উল্লেখ করেন, ভোক্তারা ভ্যাট দিলেও তা সরকার পাচ্ছে না। এই অভিযোগ ও আরো গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম অভিযোগটির তদন্ত করার জন্য ভ্যাট গোয়েন্দাকে নির্দেশ দেন।

মহাপরিচালক বলেন, ভ্যাট গোয়েন্দা দলের আকষ্মিক পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠানটিতে ভ্যাট আইনের বাধ্যবাধকতা অনুসারে ক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.১) ও বিক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.২) পাওয়া যায়নি। ভ্যাট আইন অনুযায়ী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই দুটো হিসাব সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পরিদর্শনকালে ভ্যাট সংক্রান্ত অন্যান্য দলিলাদি দেখাতে বলা হলে, উপস্থিত মালিকপক্ষ তা দেখাতে পারেননি এবং এগুলো সংরক্ষণ না করার বিষয়ে তারা কোন সদুত্তরও দিতে পারেননি। প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গনে মালিকপক্ষ নিজস্ব বাণিজ্যিক দলিলাদিও রাখেন না। এতে ভ্যাট গোয়েন্দা দলের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে মনগড়া ও কাল্পনিক হিসাবের ভিত্তিতে ‘মি. বেকার’ স্থানীয় ভ্যাট সার্কেলে রিটার্ন দাখিল করে আসছে। এমনকি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে অভিযানের আগের দিন যে সব পণ্য ফ্যাক্টরি থেকে বের করেছে তার মূসক-৬.৫ চালান দেখাতে বলা হলেও তারা দেখাতে পারেননি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি কেন্দ্রীয় নিবন্ধিত হওয়ায় মূসক-৬.৫ এর মাধ্যমে পণ্য ফ্যাক্টরি থেকে আউটলেটে নেয়ার বিধান থাকলেও তা পরিপালন করা হয় না। একইসঙ্গে তারা ভোক্তাদের নিকট থেকে সংগ্রহ করা ভ্যাট সরকারি কোষাগারে যথাযথভাবে জমা দেয়নি। অভিযানে গোয়েন্দা দল প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গনে অবস্থিত অন্য একটি ভবনের বিভিন্ন তলায় ও ছাদে অবস্থিত কর্মচারীদের থাকার কক্ষ তল্লাশি করে তাদের পুরোনো কিছু অসংগঠিত তথ্যাদি পাওয়া যায়। গোয়েন্দা দল সেখান থেকে এসব কাগজপত্র জব্দ করে।

আরও দেখা যায়, পরবর্তীতে জব্দকৃত এবং অনুসন্ধানের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য ও দলিলাদির ভিত্তিতে ২০১৪ সালের জুলাই হতে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে শুধুমাত্র বিক্রয়ের উপর ৩৪ কোটি ৬০ লাখ ৫৬ হাজার ৩৩৯ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়। এই ভ্যাটের উপর মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ২৫ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার ৯১ টাকা সুদ টাকা প্রযোজ্য। এছাড়া ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর হতে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে জব্দকৃত ক্রয়ের চালান পরীক্ষা করে কাঁচামাল ক্রয়ের উপর অপরিশোধিত উৎসে ভ্যাট ১৭ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬৮ টাকা পাওয়া যায়। এর উপর মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে সুদ ৩৪ হাজার ৬৭৯ টাকা প্রযোজ্য।

দেখা যায়, ২০১৪ সালের জুলাই হতে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন শো-রুম এর স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার উপর অপরিশোধিত ভ্যাট এক কোটি ৫৬ লাখ ৩৯ হাজার ৪০ টাকা। যার উপর মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে সুদ প্রযোজ্য ৯৮ লাখ ৪৮ হাজার ৮১৪ টাকা। ২০১৪ সালের জুলাই হতে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন সেবা ক্রয়ের উপর অপরিশোধিত উৎসে ভ্যাট ১০ কোটি ২০ লাখ ৭৫ হাজার ১৮৩ টাকা। যার উপর মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে সুদ ৭ কোটি ২৪ লাখ ৫৫ হাজার ১৪১ টাকা প্রযোজ্য।

‘মি.বেকার কেক অ্যান্ড পেস্ট্রি শপ লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় এবং উৎসে কর্তন বাবদ সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাট ৪৬ কোটি ৫৫ লাখ ৪ হাজার ৫৩১ টাকা উদঘাটন করা হয়। এই অপরিশোধিত মূসক এর উপর সুদ বাবদ মোট ৩৩ কোটি ৬১ লাখ ২৫ হাজার ৭২৫ টাকা প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি সর্বমোট ৮০ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২৫৬ টাকা ভ্যাট ফাঁকির সাথে জড়িত। প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন এবং উৎসে ভ্যাট না দেয়ায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আজ ভ্যাট গোয়েন্দা মামলা দায়ের করেছে। ‘মি বেকার’ এর আরেকটি সুইটমিটের ব্যবসা রয়েছে। রাজধানীতে এর ৫টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এইসব বিক্রয়কেন্দ্রের তথ্যাদিও অনুসন্ধান করা হচ্ছে বলেও জানান ড. মইনুল খান।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০