কাজী সালমা সুলতানা: প্রায় দুই হাজার বছরের লিখিত ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাঙালি কখনও স্বাধীন আবার কখনও বিদেশি শাসকদের শোষণের শিকার হয়েছে। তবে বরাবরই বাঙালি লড়াই করেছে স্বাধীনতার জন্য।
১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের ভেতর দিয়ে বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের সূচনা হয়। এরপর প্রায় দুইশ বছর বাংলাসহ গোটা ভারতবর্ষ ব্রিটিশদের শোষণে নিষ্পেষিত হতে থাকে।
১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের মাধ্যমে সবচেয়ে সংঘটিত সংগ্রাম শুরু হয়। সেই সংগ্রামে পরাজয় ঘটলেও বাঙালিদের মধ্যে এক বিপ্লবী চেতনার জš§ দেয়।
উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন কায়েম হলেও স্বাধীনতার সংগ্রাম থেমে থাকেনি। মাস্টার দা সূর্যসেন, বীরকন্যা প্রীতিলতা, ক্ষুদিরাম, বিনয়, বাদল, দিনেশসহ অসংখ্য বাঙালি অকাতরে প্রাণ দিয়েছে স্বাধীনতার জন্য। প্রায় ২০০ বছর শাসনের পর রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে চলে যায়। এরপরই বাংলাকে বিভক্ত করে হয় দ্বি-জাতি তত্ত্বের আসার দর্শনের ওপর দাঁড়িয়ে। স্বাধীনতার নামে পূর্ববাংলা পাকিস্তানের উপনিবেশিক শাসনের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়।
ভারত ভাগের পরই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করে। ভাষার প্রশ্নে দেখা দেয় প্রথম অসন্তোষ। সেই অসন্তোষ দানা বেঁধে ওঠে আন্দোলন আর সংগ্রামের পথে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের বৈষম্যমূলক আচরণ বাঙালিকে ঠেলে দিয়েছে রাজপথে।
১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ বছরব্যাপী ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতীয়তাবোধের জন্ম দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় আন্দোলনের পথ বেয়ে স্বাধীনতার পথে যেতে বাধ্য হয় বাঙালি জাতি।
বাঙালির দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত রূপ পায় ১৯৭১ সালে। তবে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সুযোগ পায় বাঙালি। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। নির্বাচনের ফলাফলকেও উপেক্ষা করে পাকিস্তানি শাসক।
১৯৭১-এর ১ মার্চ প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষণে আকস্মিভাবে ৩ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করে।
তার এ ভাষণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতারা দলে দলে বটতলায় জড়ো হতে শুরু করে। এদিন ঢাকায় ছাত্রসহ সব শ্রেণির মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিকালে হোটেল পূর্বাণীতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। পরদিন ২ মার্চ ঢাকা শহরে হরতাল ও ৩ মার্চ সারাদেশে হরতাল ও ৭ মার্চ রেসকোর্সে জনসভা অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন।
সেদিন ‘জয় বাংলা’ ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো; তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা; জাগো জাগো বাঙালি জাগো’সহ নানা স্বাধীনতার স্লোগানে আন্দোলিত হয় ঢাকা নগরী।