মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সোনালী ব্যাংকের প্যাকেজ ঋণ

শওকত আলী: মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসানাত। রাজধানীর উত্তর শাজাহানপুরের বাসিন্দা। স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে থাকেন। ছেলে তানভীর হাসানাত তানহা ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেয়ে নিশাত জাহান অনন্যা আর্কিটেকচারে পড়াশোনা করছেন। সংসারে অভাব-অনটন খুব একটা নেই। তবে এ দুই সন্তানের সেমিস্টারের ফি দেওয়ার জন্য একই সঙ্গে প্রায় লাখ খানেক টাকার প্রয়োজন পড়ে। একটু চাপেই পড়ে যান আবুল হাসানাত।

সোনালী ব্যাংকের শাহজাহানপুর শাখায় ঋণের আবেদন করেছেন হাসানাত। আলাদা করে কোনো জামানত রাখতে হয় না বলে এ ঋণ বিতরণে খুব বেশি ঝামেলা নেই। শাখা ম্যানেজার যত দ্রুত সম্ভব দুই লাখ টাকার ঋণ গ্রাহকের অনুকূলে বিতরণ করেন। পরে সে টাকা দিয়েই দুই ছেলেমেয়ের সেমিস্টার ফি পরিশোধ করেন তিনি।

এভাবে কেউ ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে বা বাড়াতে, নিজেদের চিকিৎসা খরচ মেটাতে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে একসঙ্গে দুই লাখ টাকা ঋণ নিতে পারছেন মুক্তিযোদ্ধারা।

সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেয় সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পান প্রতি মাসে, যা তিন মাস  অন্তর সরকার একসঙ্গে দেয়। এ টাকাও যারা একসঙ্গে নিয়ে কোনো কাজে লাগাতে চান তারা এ ঋণ সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। ভাতার টাকা ব্যাংকে এলে সেখান থেকে কিস্তির টাকা কেটে রাখা হয়। ফলে গ্রাহককে আলাদা করে কিস্তি দিতে হয় না।

২০১১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের সোনালী ব্যাংক সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকার ঋণ সুবিধা দিতো। ভাতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে ঋণের প্যাকেজটি তৈরি করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এখন সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকার ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়।

সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত সরকারি ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মেয়াদি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৯৮১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। সংখ্যায় প্রায় ৫০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা এ ঋণ সুবিধা গ্রহণ করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওবায়েদ ওল্লাহ আল মাসুদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এটা আমাদের সামাজিক একটি কাজ। এ ঋণে খেলাপি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আলাদা করে কিস্তি দিতে হয় না বলে প্রচুর চাহিদা। এখন পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে। আমরা নামমাত্র সুদে তাদের মাঝে ঋণটি বিতরণ করছি।’

ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, পাঁচ বছর মেয়াদি ঋণে মাসিক কিস্তি আসে চার হাজার ১০০ টাকার কিছু বেশি। এতে সুদহার নেওয়া হয় ৭ শতাংশ হারে। কেউ চাইলে অবশ্য ঋণ পরিশোধের মেয়াদ সাত বছরও করতে পারে।

এ ঋণের বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জেনারেল ম্যানেজার মো. খাইরুল কবির শেয়ার বিজকে বলেন, ‘অনেক মুক্তিযোদ্ধা ঠিকমতো নিজেদের চিকিৎসা করাতে পারেন না, কারও ঘরবাড়ি তৈরি করার জন্য টাকার প্রয়োজন পড়ে, ছোটখাটো ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য একসঙ্গে কিছু টাকার প্রয়োজন পড়ে। আমরা তাদের চাহিদা মোতাবেক একটা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি মাত্র। মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়াতে পারছি, এটা একটা বড় বিষয়। তাদের পাশাপাশি আমরা আসলে সরকারকেও সহযোগিতা করছি।’

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০