Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 1:31 pm

মুখ দিয়ে ছবি এঁকে চিকিৎসার খরচ জোগাচ্ছেন নওগাঁর ইব্রাহিম

. কে. সাজু, নওগাঁ : দুই হাত নেই, দুটি পা থাকলেও তা অচল। এরপরও দমে যাননি এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিম। নিজের প্রতিভাকে তিনি বিকশিত করে চলেছেন। ঠোঁট দিয়ে তুলি চেপে ধরে একের পর এক এঁকে চলেছেন ছবি। আর সেই ছবি বিক্রির টাকায় নিজের চিকিৎসা ও সংসারের খরচ জোগাচ্ছেন তিনি।

এমদাদুলের বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার বালুবাজার গ্রামে। ২০০৫ সালে দিনাজপুরে পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যান হিসেবে কাজ করার সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি। দুর্ঘটনার পর দিনাজপুর সদর হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সাভারের সিআরপিতে চিকিৎসা নেন আট বছর।

চিকিৎসায় পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি তিনি। শরীর থেকে কেটে ফেলতে হয় দুই হাত। পা দুটি কাটা না লাগলেও হয়ে যায় অচল। এরপরও হাল ছাড়েননি ইব্রাহিম। হুইলচেয়ারের সঙ্গে বিশেষ কায়দায় লাগানো ক্যানভাসে এঁকে চলেছেন নানা ছবি।

ইব্রাহিম জানান, দুর্ঘটনার পর সিআরপিতে থাকা অবস্থায় সবার কাছে শুনেছেন, লাভলী নামে একজন মুখ দিয়ে ছবি আঁকেন। লাভলীর গল্প শুনে তিনি অনুপ্রাণিত হন। চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হলে ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ) নামের একটি সংগঠনের সহযোগিতায় শুরু করেন মুখ দিয়ে ছবি আঁকা। ওই সংগঠনের উদ্যোগে বনানীর লীলা গ্যালারিতে ২০১৬ সালে তার আঁকা ছবির একক প্রদর্শনী হয়েছে।

ইব্রাহিম বলেন, ‘প্রথম দিকে ছবি আঁকতে সমস্যা হতো। তবে এখন আর সমস্যা হয় না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছবি আঁকতে পারি। এ পর্যন্ত দুই হাজার ছবি এঁকেছি। ঢাকায় থাকা অবস্থায় যেসব এঁকেছি, এর প্রায় সব বিক্রি হয়ে গেছে। ঢাকার লোকজন ছবির কদর ভালো বুঝত। কিন্তু গ্রামের বাড়িতে আসার পর আঁকা ছবি তেমন বিক্রি হচ্ছে না। গ্রামের লোকজন ছবি বা শিল্পীর কদর বোঝে না।’

শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়ায় এখন দৈনন্দিন কাজ ও ছবি আঁকায় সহায়তা করেন ইব্রাহিমের অসুস্থ মা। ছবি বিক্রির টাকা থেকে সংসারের খরচ দেন তিনি। দুর্ঘটনার পর চিকিৎসার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে তিনি কোনো সহযোগিতাও পাননি।

ইব্রাহিম আরও বলেন, নিজ বাড়িতে থেকে আঁকা ছবি বিক্রি করা তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সুযোগ পেলে ঢাকা কিংবা বড় কোনো শহরে নিজের আঁকা ছবির প্রদর্শনী করে, ছবি বিক্রি করে নিজের চিকিৎসার খরচ ও সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে চান।

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে ইব্রাহিমকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে।’ এ প্রতিভা মূল্যায়নে ইব্রাহিমকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।