নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘আর সময় চাওয়া হবে না’ মর্মে মুচলেকা দিয়ে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ভবন থেকে কার্যালয় সরিয়ে নিতে আরও এক বছর ১০ দিন সময় পেল পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। দুই দশক আগে নির্মিত ১৬ তলা ওই ভবন ভাঙার জন্য ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সময় পাচ্ছে সংগঠনটি।
আদালতের নির্দেশে বিজিএমইএ সংশোধিত মুচলেকা জমা দেওয়ার পর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ গতকাল সোমবার এ আদেশ দেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এবার যেন বাস্তবায়ন হয়, ১২ মাস ১০ দিন সময় পাচ্ছেন এটা মনে রাখবেন।’
প্রায় আট বছর আইনি লড়াইয়ের পর আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে গত বছর বিজিএমইএ ভবনের ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছিল। তারপরও এ সংগঠনটিকে নিজেদের কার্যালয় সরিয়ে ওই ভবন ভাঙার জন্য তিন দফায় মোট ২৫ মাস সময় পেল।
আদালতে বিজিএমইএ’র পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং এ মামলায় হাইকোর্টের অ্যামিকাস কিউরি মনজিল মোরশেদও উপস্থিত ছিলেন আদালতে।
আদেশের পর বিজিএমইএ’র আইনজীবী ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০১৩ সালে বিজিএমইএকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল ভবন ভাঙার জন্য। ওই আদেশ বাস্তবায়ন করার জন্য এক বছর সময় চেয়েছিলাম। আবেদনটি গ্রহণ করার জন্য আদালত অঙ্গীকারনামা দিতে বলেছিলেন। আজকে আমরা সংশোধন করে অঙ্গীকারনামা দিয়েছি। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে আমাদের এক বছর সময় দিয়েছেন। অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে, বিজিএমইএ এরপর আর সময় চাইব না। দ্বিতীয়ত, আদালত আগে যে আদেশ দিয়েছে, বিজিএমইএ তা অবশ্যই মানব।’
এর আগে এই অঙ্গীকারনামা বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে দেওয়া নিয়ে আদালত প্রশ্ন তুলেছিলেন। পরে সংশোধিত অঙ্গীকারনামা বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে।
মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘অঙ্গীকারনামায় বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভবন ভাঙতে আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে কোনো ব্যত্যয় হলে বিজিএমইএ এ জন্য দায়ী থাকবে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল, ভবন ভাঙতে বিজিএমইএকে যেন আর সময় দেওয়া না হয়। কারণ এর আগেও তারা দুইবার সময় নিয়েছে। আমি মনে করি, এ সময় চাওয়ার মধ্যদিয়ে বিজিএমইএ দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে নিজেদের ভাবমূর্তির সংকট তৈরি করেছে।’
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৮ সালে বিজিএমইএ তাদের প্রধান কার্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য সোনারগাঁও হোটেলের পাশে বেগুনবাড়ী খালপাড়ের এ জায়গাটি নির্ধারণ করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছ থেকে পাঁচ কোটি ১৭ লাখ টাকায় জমিটি ক্রয় করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বছর বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আর ২০০৬ সালের অক্টোবরে বিজিএমইএ ভবন উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না নেওয়া, আইন লঙ্ঘন করে বেগুনবাড়ী খালের একাংশ ভরাট করা এবং ভবনটি নির্মাণে অনুমোদিত নকশা অনুসরণ না করাসহ বেশকিছু কারণে আলোচনায় আসে ভবনটি। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ২০১০ সালের ৩ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের তিন এপ্রিল বিজিএমইএ ভবন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হিসেবে বিজিএমইএ’র আইনের প্রতি আরও বেশি শ্রদ্ধাশীল হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল।’ ওই বছর মে মাসে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে লিভ টু আপিল করে। ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগ তা খারিজ করলে ভবন ভাঙার বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ই বহাল থাকে। পরে বিজিএমইএ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনও খারিজ হয়ে যায়। রায়ের পর কার্যালয় সরিয়ে নিতে বিজিএমইএ তিন বছর সময় চায়। তবে ছয় মাস সময় দেন আদালত। ছয় মাস সময় শেষ হওয়ার আগে আগে আরও এক বছর সময় চেয়ে গত বছর ২৩ আগস্ট আবেদন করে বিজিএমইএ। আপিল বিভাগ তখন ভবনটি ভাঙতে ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেয়। আদেশে ‘এটাই শেষ সুযোগ, আর সময় দেওয়া হবে না’ বলা হলেও গত পাঁচ মার্চ ভবনটি ভাঙতে আরও এক বছর সময় চেয়ে আবেদন করে বিজিএমইএ। এ বিষয়ে শুনানি শেষে মুচলেকা নিয়ে এক বছরের সময় দেওয়া হলো।