Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 10:37 pm

মুজিববর্ষে এনবিআর পাচ্ছে ‘নতুন ভবন’

রহমত রহমান: অবশেষে এনবিআর পাচ্ছে নতুন ভবন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিকে বিল্ডার্সকে বাদ দেয়া হয়েছে। নতুন ঠিকাদার নিয়োগে টেন্ডার প্রক্রিয়া প্রায় শেষের পথে। এরই মধ্যে প্রকল্প মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে প্রকল্পের ব্যয় বাড়েনি। চলছে মুজিববর্ষ। চলতি বছরের ডিসেম্বরের আগেই কাজ শেষ করার আশা প্রকল্প কর্মকর্তাদের। আর ১৬ ডিসেম্বরের আগেই মুজিববর্ষের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে উদ্বোধন করা হবে নতুন এ ভবন। এনবিআর ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এনবিআর ও প্রকল্প সূত্রমতে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকল্প মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। অক্টোবর মাসে জিকে বিল্ডার্সের মালিক জিকে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার পর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিকে বিল্ডার্সকে কালো তালিকাভুক্ত করে। এরপর ‘জাতীয় রাজস্ব ভবন নির্মাণ প্রকল্পের’ টেন্ডার বাতিল করা হয়। অক্টোবর মাসে জিকে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার সময় ভবনের প্রায় ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে যায়। তিনি গ্রেপ্তার না হলে প্রকল্প মেয়াদে কাজ শেষ হতো।

সূত্র আরও জানায়, জানুয়ারি মাসে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়। করোনার কারণে তা আর হয়নি। ২০২০ সালের ৫ আগস্ট কর অঞ্চল-১০-এর কমিশনার মো. লুৎফুল আজীমকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। সব প্রক্রিয়া শেষে ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্প মেয়াদ বাড়ানো হয়। ভবনের কাজ দ্রুত শেষ করতে গণপূর্ত অধিদপ্তর কাজের ধরন অনুযায়ী আলাদা আলাদা টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করে। নভেম্বর মাসে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। ৯টি টেন্ডারের মধ্যে আটটি শেষ হয়েছে, একটি বাকি রয়েছে। আটটির মধ্যে সবচেয়ে বড় কাজ সিভিল, ৯০ কোটি টাকার কাজ। পূর্তমন্ত্রীর সই হলে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হবে। বাকিগুলোর ভ্যালুয়েশন হয়ে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হবে।

সূত্র জানায়, ভবনের ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। অন্যান্য কাজ শেষ হতে তেমন সময় লাগবে না। তবে লিফট নিয়েই বড় সমস্যা। সাইজ অনুযায়ী লিফটের মাপ দিতে হয়। এরপর সেই কোম্পানি লিফট তৈরি করে। জিকে বিল্ডার্স জার্মানির এক প্রতিষ্ঠানকে আটটি লিফট অর্ডার

 দেয়। সে অনুযায়ী কোম্পানি লিফট তৈরি করে শিপমেন্টের জন্য সেই দেশের পোর্টে রেখে দেয়। এরই মধ্যে জিকে শামীম গ্রেপ্তার হয়ে যান। ফলে সেই লিফট দেশে আসেনি। এখন টেন্ডারে যে ঠিকাদার কাজ পাবেন, সেই ঠিকাদারের ওপর নির্ভর করবেÑতিনি নতুন কোম্পানিকে লিফট অর্ডার করবেন, না জিকে বিল্ডার্সের অর্ডার করা লিফট নিয়ে আসবেন। লিফট অর্ডার, তৈরি ও দেশে এসে পৌঁছাতে সাত মাস সময় লাগবে।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খরচের দিক থেকে ৪৬ শতাংশ আর দৃশ্যমান ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। জিকে বিল্ডার্স প্রচুর পরিমাণ ম্যাটেরিয়াল এনে রেখেছে। এসব মালামাল নিয়েই ঝামেলা তৈরি হয়েছে। জিকে শামীম সম্মানহানির জন্য ৭০০ কোটি টাকার একটি এবং টেন্ডার বাতিল করায় আরও একটি মামলা করেছেন।

জিকে বিল্ডার্সের হিসাবে, ১২তলা ভবনের ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পঞ্চম তলা পর্যন্ত টাইলস ও বিদ্যুতের কাজ শেষ হয়েছে। সেন্ট্রাল এসি বসানো হয়েছে। জেনারেটর, এসি, টাইলসসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল মজুত রয়েছে। জিকে বিল্ডার্সের সঙ্গে সহ-ঠিকাদার হিসেবে ১৭টি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ও কর কমিশনার মো. লুৎফুল আজীম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সব স্বাভাবিক থাকলে চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে। আমাদের লক্ষ্য মুজিববর্ষের মধ্যে এবং ১৬ ডিসেম্বরের আগেই কাজ শেষ করার আপ্রাণ চেষ্টা থাকবে। আমার লক্ষ্য হলো, নভেম্বরের আগেই কাজ শেষ করা। মুজিববর্ষের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে উদ্বোধনের আশা করছি। ’

প্রকল্প সূত্র জানায়, ১৯৯২ সালের ২০ এপ্রিল আগারগাঁওয়ে তিন একর জমি বরাদ্দ দেয় সরকার। পরে জটিলতায় কাজ শুরু হয়নি। ২০০৮ সালের ২৪ নভেম্বর একনেক বৈঠকে ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভবন নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। ১৪১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০তলা ভিত্তির ওপর ১২তলা ভবন নির্মাণ করার কথা ছিল। শুরুতেই জমি অধিগ্রহণ ও দখল-সংক্রান্ত জটিলতায় ২০১৪ সাল পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে হয়। শুরু হয় আইনি লড়াই। ২০১৪ সালের ৫ মার্চ আদালতের নির্দেশে জমির দখল নেয় এনবিআর। কাজ শুরু হয়। ২০১৫ সালে ২০ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ২০তলার স্থলে ৩০তলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী কাজ শুরু হয়। ২০১৯ বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি একনেক সভায় প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় ১৪১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৯৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা করা হয়।