বাজারে নতুন কোম্পানি আসবে এটা ভালো উদ্যোগ কিন্তু বাজারের অসুখ কী, সেটা নির্ণয় ও তার সমাধান জরুরি। নেসলে কিংবা ইউনিলিভারের মতো বহুজাতিক কোম্পানি এলে বিশ্বব্যাপী বাজারের মার্কেটিং হবে। তারল্য সংকটের জন্য সরকার অর্থ সহায়তা করছে। এর সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান মুনাফা করছে, তাদের বাজারে আনলে বিনিয়োগকারীরাও আকৃষ্ট হবেন। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
খুজিস্তা নুর-ই-নাহারিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দি ল’ইয়ার অ্যান্ড জুরিটসের হেড অব চেম্বার ব্যারিস্টার এএম মাসুম ও বিজিএমএ’র সাবেক সভাপতি শহিদ উল্লাহ আজিম।
এএম মাসুম বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারবে। তহবিলের ১০ শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে হবে। এ বিনিয়োগ পুঁজিবাজার এক্সপোজার-সীমার আওতামুক্ত থাকবে। এ তহবিল গঠনে রেপোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ ধার নিতে পারবে ব্যাংকগুলো। রেপো সুদহার হবে পাঁচ শতাংশ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান (মার্চেন্ট ব্যাংক ও ডিলার লাইসেন্সধারী ব্রোকারেজ হাউস) এবং অন্যান্য মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউস (ডিলার) শুধু পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য এ তহবিল ব্যবহার করতে পারবে। তবে বাজারে তারল্য সংকট দূর করার জন্য সরকারের এটি যেহেতু বিশেষ ফান্ড, তাই সুদহার আরেকটু কমানো গেলে ভালো হতো।
সম্প্রতি সরকারি কয়েকটি ব্যাংক বাজারে তালিকাভুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে কিন্তু ডিএসইর তালিকাভুক্তির নিয়মে বলা আছে, কীভাবে শেয়ার বাজারে আনতে হবে। কিন্তু সেখানে এটিও উল্লেখ আছে, অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের পাঁচ বছরের কমার্শিয়াল অপারেশন থাকতে হবে এবং তিন বছর প্রফিট থাকতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ ব্যাংকের মুনাফা নেই। আবার কনসোলিডেটেড লস থাকতে পারবে না। নগদ অর্থপ্রবাহ থাকতে হবে। এসব শর্ত মেনে বাজারে আসাটা কঠিন হবে। বাজারে নতুন কোম্পানি আসবেÑএটা ভালো উদ্যোগ; কিন্তু বাজারের অসুখ কী এবং তার সমাধান জরুরি। নেসলে কিংবা ইউনিলিভারের মতো বহুজাতিক কোম্পানি এলে বিশ্বব্যাপী বাজারের মার্কেটিং হবে। একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, আমাদের বাজারে তারল্য সংকটে একই সঙ্গে আগের তুলনায় বিনিয়োগকারী কম। তাই বিনিয়োগকারী বাড়াতে যা প্রয়োজন, তা-ই করতে হবে। তারল্য সংকটের জন্য সরকার অর্থ সহায়তা করছে। এর সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান মুনাফা করছে, তাদের বাজারে আনলে বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবেন।
শহিদ উল্লাহ আজিম বলেন, গত সাত মাসে আমাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। এর সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে করোনাভাইরাস। এর সুফল-কুফল উভয়ই রয়েছে। চীনে যেসব অর্ডার যেত, তার অনেকগুলো হয়তো বাংলাদেশ আসবে; কিন্তু আমরা গার্মেন্ট প্রোডাক্টের প্রধান কাঁচামাল চীন থেকে আনি। সুতরাং, করোনাভাইরাসের প্রভাব সব দেশেই পড়বে। তাছাড়া যেভাবে উৎপাদন খরচ বাড়ছে, তাতে গার্মেন্ট সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
যেখানে গার্মেন্ট খাতে আমাদের ভালো করার কথা, সেখানে ভিয়েতনাম সে সুবিধা পাচ্ছে। এর কারণ প্রথমত, ভৌগোলিক ও সংস্কৃতি। দ্বিতীয়ত, তাদের রফতানিনীতি ভালো। আমাদের দেশে গার্মেন্ট ও রফতানিবিষয়ক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর সমাধান না করলে একদিন আমরা গার্মেন্ট পণ্য রফতানির বর্তমান অবস্থান হারিয়ে ফেলব।
শ্রুতিলিখন: পিয়াস