Print Date & Time : 27 June 2025 Friday 2:44 am

মুনাফায় প্রবৃদ্ধির নেপথ্যে পুঁজিবাজার

পলাশ শরিফ: নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাতের কোম্পানি আইডিএলসি ফাইন্যান্সের কর-পরবর্তী মুনাফা সমাপ্ত আর্থিক বছরে প্রায় ২৮ শতাংশ বেড়েছে, যা এর আগের ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে প্রায় ২১ শতাংশ ছিল। সে হিসেবে কোম্পানিটির প্রবৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় প্রায় সাত শতাংশ বেড়েছে। কর-পরবর্তী মুনাফার এ প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে পুঁজিবাজার। শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি ও লভ্যাংশের ওপর ভর করে আইডিএলসির বিনিয়োগ আয় প্রায় ৫৭ শতাংশ বেড়েছে। যা কর-পরবর্তী মুনাফার প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করেছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত আর্থিক বছরে নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাতের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি আইডিএলসি ফাইন্যান্স প্রায় ২২৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে, যা এর আগের আর্থিক বছরের একই সময় ছিল প্রায় ১৭৮ কোটি দুই লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরেই কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা প্রায় ৪৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বা প্রায় ২৮ শতাংশ বেড়েছে। আর ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে প্রায় ১৭৮ কোটি টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিল আইডিএলসি। ওই আর্থিক বছরে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফার প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ২১ শতাংশ।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে আইডিএলসির প্রকৃত সুদ আয় ছিল প্রায় ৩৯৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, যা এর আগের আর্থিক বছরে প্রায় ৩৭৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ছিল। এ আয়ে প্রায় সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে বিনিয়োগ আয় বৃদ্ধির কারণে কোম্পানিটির পরিচালন আয়ে প্রায় ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। পরিচালন আয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধির কারণে ওই আর্থিক বছর শেষে আইডিএলসির কর-পরবর্তী মুনাফা প্রায় ২২৭ কোটি ৭১ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা এর আগে ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে প্রায় ১৭৮ কোটি টাকা ছিল।

আয়-মুনাফায় প্রবৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আরিফ খান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সর্বশেষ আর্থিক বছরে আইডিএলসি ফাইন্যান্স ও তার সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো করেছে। সবগুলো প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত প্রচেষ্টার কারণেই আয়-মুনাফায় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আয় বৃদ্ধি প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে। শুধু এ বছরই নয়, ধসের পর পুঁজিবাজার নি¤œমুখী থাকলেও কয়েক বছরে আইডিএলসি ১৫ শতাংশেরও বেশি হারে ক্যাপিটাল গেইন করেছে।’

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, আইডিএলসির কর-পরবর্তী মুনাফা প্রবৃদ্ধির নেপথ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে পুঁজিবাজার। তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে সম্মিলিতভাবে সমাপ্ত আর্থিক বছরে প্রায় ৮০ কোটি ৮১ লাখ টাকা প্রফিট গেইন করেছে আইডিএলসি। যা এর আগের বছরে ছিল ২২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরেই এ মুনাফা প্রায় ৫৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বা প্রায় ২৬৪ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কাছ থেকে প্রায় ১৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা লভ্যাংশ পেয়েছে আইডিএলসি। বিনিয়োগের চারটি খাতের মধ্যে বাকি দুই খাতে আয় কমলেও পুঁজিবাজার থেকে আয় বৃদ্ধি কোম্পানিটির বিনিয়োগ আয় বৃদ্ধির নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। ওই আর্থিক বছরে আইডিএলসির বিনিয়োগ আয় প্রায় ৬০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বা প্রায় ১২৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়েছে।

উল্লেখ্য, ৯০ দশকের শুরুতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় দেশের প্রথম নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্স। ১৯৮৫ সালে বাণিজ্যিক পথচলা শুরুর পর প্রায় আড়াই দশকে দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি হিসেবে স্থান করে নেয় আইডিএলসি। এক হাজার কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে বর্তমানে আইডিএলসির পরিশোধিত মূলধন প্রায় ৩৭৭ কোটি টাকা। কোম্পানিটির মোট প্রায় ৩৭ কোটি ৭০ লাখ শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতেই ৫৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর হাতে ১৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীর হাতে ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে ১৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সর্বশেষ আর্থিক বছরে বিনিয়োগকারীকে ৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে আইডিএলসি। এর আগে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ডিএসইতে ৭৩ টাকায় লেনদেন হয়েছে।