মুনাফা তুলে নগদ অর্থ হাতে রাখছেন বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের পুঁজিবাজার সপ্তাহের ব্যবধানে সূচকের পতনের মাধ্যমে গত সপ্তাহ পার করছে। এতে টানা চার সপ্তাহে ধরে উত্থানের পর পতন হয়েছে পুঁজিবাজারে। সপ্তাহটিতে সূচকের সঙ্গে লেনদেন কমেছে ৩১ শতাংশের বেশি। গত সপ্তাহে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত ছিল। গত চার সপ্তাহ উত্থানের ফলে বিনিয়োগকারীরা স্বল্প সময়ে যে মুনাফায় ছিল সেটা সংগ্রহে এ পতন হয়েছে বলে জানিয়েছে বাজার-সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে বর্তমানে প্রান্তিক শেষে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের মৌসুম চলছে। এতে যে কোম্পানির প্রান্তিক শেষে ভালো মুনাফা হয়েছে এবং যে কোম্পানির শেয়ারে স্বল্প সময়ে মুনাফা করা যাবে, সে শেয়ারে বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগকারীরা নগদ অর্থ সংগ্রহ করে হাতে রাখার প্রবণতায় সপ্তাহজুড়ে বিক্রির চাপ বেশি ছিল বলে জানা গেছে।

বিনিয়োগকারীরা প্রান্তিক শেষে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা পর্যালোচনা করে দ্রুত মুনাফা হয়, এমন শেয়ারে বিনিয়োগ করবে বলে তারা জানান। আলোচ্য সপ্তাহে পতনেও সাধারণ বিমা খাতের শেয়ার কেনায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি ছিল। ফলে সব থেকে বেশি কেনার চাপ থাকায় সপ্তাহটিতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে আলোচ্য খাতের শেয়ার। এতে দ্বিতীয় সপ্তাহের মতো দর বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে খাতটি। এছাড়া গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপ থাকায় ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের দর সবচেয়ে বেশি কমেছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গেল সপ্তায় ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ২৫৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তায় লেনদেন হয়েছিল ৪ হাজার ৭৩৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এ সময়ের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৩১ দশমিক ২৩ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৬৫১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৯৪৭ কোটি ৮ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৫০টির, দর কমেছে ১৩৫টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২০৩টি কোম্পানির। লেনদন হয়নি ১৫টি কোম্পানির শেয়ার। সপ্তাহে প্রধান প্রধান সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে ডিএসইএক্স ২৬ দশমিক ১০ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩৩৯ দশমিক ৫১ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ৩৬ দশমিক ৯২ পয়েন্ট কমে এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৯ দশমিক ২২ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ২ হাজার ১৫৯ দশমিক ৮৭ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৩৭৩ দশমিক ৯৬ পয়েন্টে।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের প্রধান সূচক টানা চার সপ্তাহ ধরে বৃদ্ধির পর নেতিবাচক অবস্থায় শেষ হয়েছে। কারণ সপ্তাহ জুড়ে বিনিয়োগকারীরা স্বল্পমেয়াদি মুনাফা সংগ্রহ করেছে এবং সম্প্রতি শেষ হওয়া তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রান্তিক আয় ঘোষণার পর বাজারের গতি পর্যবেক্ষণ করে নতুন করে বিনিয়োগ করবে। এজন্য নগদ অর্থ হাতে রাখতে বিক্রির চাপ বেশি ছিল বলে জানা গেছে।

তারা জানান, এই সপ্তাহের প্রথম তিন কার্যদিবস বাজার বিক্রির চাপের সম্মুখীন হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে বড় মূলধন এবং ট্রেন্ডে থাকা শেয়ারের মূল্য সংশোধনের কারণে বাজারে অস্থিরতা লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া ঝুঁকি কমাতে বিনিয়োগকারীদের মাঝে উদ্বেগ থাকায় বিনিয়োগ তুলে নিতে প্ররোচিত করেছিল। বাজার সপ্তাহের শেষের কার্যদিবসগুলোতে পুনরুদ্ধার হয়েছে। কারণ সপ্তাহের শুরুর সংশোধনে স্বল্পমেয়াদি লাভের পেছনে থাকা বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করেছে বলে জানান তারা।

এদিকে গত সপ্তাহে আগ্রহ বেশি থাকা সাধারণ বিমা খাতের শেয়ারদর বেড়েছে ২ দশমিক ৮০ শতাংশ। এছাড়া আর কোনো খাতের শেয়ারদর গত সপ্তাহে বৃদ্ধি পায়নি। এছাড়া গত সপ্তাহে বিক্রির চাপ সবচেয়ে বেশি থাকা ভ্রমণ খাতের শেয়ারদর কমেছে ৪ দশমিক ১০ শতাংশ। ৩ দশমিক ১০ শতাংশ শেয়ারদর কমে দ্বিতীয় স্থানে ছিল আইটি খাত। তৃতীয় স্থানে থাকা সেবা ও আবাসন খাতের শেয়ারদর কমেছে ২ দশমিক ১০ শতাংশ।

অন্যদিকে গত সপ্তাহে লেনদেনের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে জীবন বিমা খাতে। খাতটিতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ২১ দশমিক ৩০ শতাংশ। এরপর দ্বিতীয় স্থানে থাকা খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ। ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ লেনদেন হয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল জীবন বিমা খাত।

এদিকে গেল সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ৪২ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহের শেষে পিই রেশিও দাঁড়িয়েছিল ১৪ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট ছিল।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০