শেখ আবু তালেব: কৌশলী বিনিয়োগকারীরা করোনাকালেও শেয়ার ব্যবসায় মুনাফা ঘরে তুলছেন। নিজেদের পোর্টফোলিওতে পরিবর্তন আনতে দেখা গেছে গত সপ্তাহে। শেয়ার হস্তান্তর করে দিয়েছেন স্বল্প মুনাফায় থাকা কোম্পানিগুলোর। এতে শেয়ার বিক্রয় চাপে ঊর্ধ্বমুখী থাকা ডিএসইর গুরত্বপূর্ণ সূচক নেতিবাচক হয়েছে সপ্তাহের শেষের দিকে।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন তথ্য বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে এমন তথ্য। অবশ্য কেউ কেউ সূচকের এই মিশ্র প্রবণতাকে বলছেন ঊর্ধ্বমুখী থাকা শেয়ারের দর সংশোধন হওয়া। এজন্য সপ্তাহের শেষের দিকে লেনদেন কিছুটা নেতিবাচক ধারায় শেষ হয়েছে। অবশ্য সপ্তাহ শেষে তিন সূচকের দুটিতেই ইতিবাচক ধারা দেখা গেছে আগের তুলনায়।
গত সপ্তাহেও বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক সবচেয়ে বেশি ছিল ওষুধ খাতের শেয়ারের প্রতি। ডিএসইর মোট লেনদেনের ৩৫ দশমিক পাঁচ শতাংশেই অবদান রাখে খাতটি। করোনাকালে এসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা আশায় বুক বাঁধছেন। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, বছর শেষে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন গত বছরের চেয়ে উন্নত হবে। এ সুফল পাবেন বিনিয়োগকারীরা। এ ভাবনায় করোনাকালেও এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বিনিয়োগ করছেন অধিকাংশই।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহেও মোট ৩৬০ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেনে অংশগ্রহণ করে। সপ্তাহ শেষে দেখা গেছে আগের চেয়ে এর মধ্যে শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় ৭৯টির, কমে ১০০টির, দর অপরিবর্তিত থাকে ১৭৯টির এবং লেনদেন হয়নি দুটির।
আগের সপ্তাহের চেয়ে গত সপ্তাহে শেয়ারদর বৃদ্ধির প্রবণতা কম দেখা গেছে। আগের সপ্তাহে যেখানে শেয়ারদর বৃদ্ধি হয় ১৪২টির, সেখানে গত সপ্তাহে হয় ৭৯টির। শেয়ারদর বৃদ্ধি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে যায় লেনদেনের আকার।
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ও শরিয়াহ্ সূচক ইতিবাচক ধারায় লেনদেন শেষ করলে প্রধান সূচক নেতিবাচক ধারায় শেষ করে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ করোনাকালেও ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তুলে নিয়েছেন অনেকেই। ফলে বাজারে শেয়ার বিক্রয় চাপ ছিল বেশি। নতুন করে কেউ সাহস করছেন না কিনতে। এ চাপে আগের সপ্তাহের চেয়ে গত সপ্তাহে শেয়ারদরে পতন ঘটে এক-তৃতীয়াংশের বেশি।
অবশ্য কোম্পানির লেনদেন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত সপ্তাহেও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে ছিল মৌল ভিত্তির মধ্যে ওষুধ, ব্যাংক, এনবিএফআই, প্রকৌশল, টেলিকম ও বিমা খাতের শেয়ার।
খাতভিত্তিক তথ্য বলছে, গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তুলতে পেরেছেন সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ খাতের শেয়ারে। এ খাতটির গেইনার ছিল চার দশমিক এক শতাংশ। এছাড়া বিবিধ খাতে এক দশমিক এক এক শতাংশ, ব্যাংকে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ ও সাধারণ বিমায় শূন্য দশমিক ছয় শতাংশ গেইন করেন বিনিয়োগকারীরা।
এ সময়ে বস্ত্র খাতে শূন্য দশমিক এক শতাংশ, সিমেন্টে শূন্য দশমিক এক শতাংশ, মিউচুয়াল ফান্ডে শূন্য দশমিক তিন শতাংশ, সিরামিকে শূন্য দশমিক ছয় শতাংশ, খাদ্যে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ, প্রকৌশলে এক দশমিক এক শতাংশ, ওষুধ খাতে এক দশমিক ৯ শতাংশ ও টেলিকম খাতেও এক দশমিক ৯ শতাংশ লোকসান গুনেন বিনিয়োগকারীরা।
একক কোম্পানি হিসেবে গত সপ্তাহে ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেনকারী কোম্পানি হচ্ছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। সর্বোচ্চ গেইনার হয় জেকিউ বলপেন।
এছাড়া শেয়ারদর বৃদ্ধিতে শীর্ষে ছিল জে কিউ বলপেন, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, ফাইন ফুডস, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, বারাকা পাওয়ার, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলস, পাইওনিয়র ইন্স্যুরেন্স, মাইডাস ফাইন্যান্স ও ইসলামী ব্যাংক।
অপরদিকে শেয়ারদর হারানোর তালিকায় শীর্ষে ছিল ঢাকা ডাইং, এপোলো ইস্পাত, পূবালী ব্যাংক, তাল্লু স্পিনিং মিলস, আইসিবি এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ড মিউচুয়াল ফান্ড, লিব্রা ইনফিউশনস, ফোনিক্স ফাইন্যান্স ফাস্ট মিউচুয়াল ফান্ড, এম্বি ফার্মা, এসইএমএল এফবিএলএসএল গ্রোথ ফান্ড ও একটিভ ফাইন কেমিক্যালস।