Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 3:00 pm

মুনাফা তোলার প্রতিযোগিতায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: ঊর্ধ্বমুখী পুঁজিবাজারে হঠাৎ করেই ছন্দপতন দেখা দিয়েছে। পতনের আঁচ লেগেছে তালিকাভুক্ত প্রায় সব ধরনের কোম্পানির শেয়ারে। যার জের ধরে গত তিন কার্যদিবস ধরে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর কমছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও ডে ট্রেডারের ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হওয়ার কারণেই এমন হয়েছে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তবে এতে বাজার পরিস্থিতি শিগগির ঠিক হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, হঠাৎ করে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নাজুক হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন। আগামীতে বাজারে আরও বৈরী পরিবেশ তৈরি হতে পারে এ শঙ্কায় কম দরে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন অনেক বিনিয়োগকারী।

জানতে চাইলে মো. রফিকুল ইসলাম নামের একজন বিনিয়োগকারী বলেন, ‘গত পাঁচ কার্যদিবসের তিন কার্যদিবসেই পুঁজিবাজারে বড় পতন দেখা যাচ্ছে। এতে আমার মতো অনেকই উদ্বিগ্ন। কারণ বাজার পরিস্থিতি ভালো থাকার কারণে অনেকই নতুন পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন। তাদেরই দুশ্চিন্তাই সবচেয়ে বেশি।’

দেশের পুঁজিবাজারে সম্প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হয়েছেন। যার জেরে বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে স্থিতিশীল পরিবেশ ছিল। গত কয়েক মাসে বিভিন্ন কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ এক থেকে পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। তবে হঠাৎ করে বাজারে ছন্দপতনে তাদের আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে বিনিয়োগকারীদের কাছে। তারাও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতো শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন পরিচালক বলেন, ‘হঠাৎ করে বাজারপরিস্থিতি এমন হবে তা ভাবিনি। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘তারা এখন ডে ট্রেডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এটা করলে বাজার নিজস্ব গতি হারাবে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের প্রকৃত কাজ হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ। এখন দেখছি তার উল্টো চিত্র। তাদের কাছ থেকে এমন আচরণ প্রত্যাশা করেন না কেউই।’

একাধিক মার্চেন্ট ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি শেয়ার বিক্রিতে মেতে উঠেছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। বিক্রির তুলনায় তারা শেয়ার কিনছেন খুবই সীমিত। যে কারণে বাজারও নি¤œমুখী হচ্ছে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি না থাকলে পুঁজিবাজার তার স্বাভাবিক গতি হারায়। যে কারণে কমে যায় লেনদেন। কমতে থাকে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর ও বাজার মূলধন। এখন যারা বাজারে লেনদেন করছেন, তারা সাধারণ বিনিয়োগকারী। তারা বলছেন, পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি অনুক‚লে রাখার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ভ‚মিকা জরুরি। তাই বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়লেও বাজারের তুলনায় তা এখনও কম। বিশ্বের বড় পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ আরও বেশি দেখা যায়। তাদের অভিমত, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারে সক্রিয় হলে এটি বাজারের জন্য ইতিবাচক। কারণ তারা বাজারের সার্বিক অবস্থা বিচার-বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করে থাকেন। তারা জানান, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা খুবই দক্ষ। কখন বাজার বাড়বে, আবার কখন পড়বে এটা তারা বুঝতে পারেন। তাই মুনাফা তুলে নেয়ার সময় তারা তুলে নেবেন এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ দীর্ঘ মেয়াদে হবে, নাকি স্বল্প মেয়াদে হবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।

প্রসঙ্গত, গত দুই কার্যদিবস ধরে সূচক পতনের পাশাপাশি কমেছে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর। দুই কার্যদিবসের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ১০৮ পয়েন্ট। তিন কার্যদিবস আগে সূচকের অবস্থান ছিল পাঁচ হাজার ৯০৯ পয়েন্ট। গতকাল তা স্থির হয় পাঁচ হাজার ৮০১ পয়েন্টে। একই সময়ে লেনদেন কমে গেছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, কোনো কারণে মার্কেট নি¤œমুখী হলেই অধিকাংশ বিনিয়োগকারীরা তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দেন। এতে পতন আরও ভারি হয়। যে কোনো পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের সহনশীল হওয়া দরকার।

একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘পুঁজিবাজারে সবাই লাভের জন্য আসেন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা মুনাফা পেলে শেয়ার বিক্রি করে দেবেন এটা স্বাভাবিক। এ জন্য তাদের দায়ী করা ঠিক হবে না।’