নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের পুঁজিবাজার সূচকের নামমাত্র উত্থানের মাধ্যমে গত সপ্তাহ পার করেছে। এর আগের সপ্তাহে পতন হলেও গত সপ্তাহে সূচক কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে পুঁজিবাজারে। সপ্তাহটিতে সূচক বাড়লেও গড় লেনদেন কমেছে। গত সপ্তাহে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটদর অপরিবর্তিত ছিল। বিনিয়োগকারীদের মুনাফা সংগ্রহের প্রবণতার ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে বাজারে অস্থিরতা ছিল বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এর আগের সপ্তাহে মুনাফা সংগ্রহের চাপে পতন হয়, আর আলোচ্য সপ্তাহে মুনাফা সংগ্রহের সঙ্গে কিছুটা বিনিয়োগ থাকায় পতনের হাত থেকে রক্ষা পায় বাজার। সপ্তাহটিতে বিক্রির বিপরীতে কেনার আগ্রহও ছিল অনেকের, যে কারণে বাজারে লেনদেন কিছুটা কমলেও সূচক বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে তিন হাজার ৯৫৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল দুই হাজার ৪০৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে এক হাজার ২১৭ কোটি দ–ই লাখ টাকা বা ৩০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭১৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৮০২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। গত সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ১১৮টির, দর কমেছে ৪৭টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২২৬টি কোম্পানির। লেনদেন হয়নি ১১টি কোম্পানির।
গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স উত্থানে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে ডিএসইএক্স ৪ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ২৭২ দশমিক ৪৩ পয়েন্টে। শরিয়াহ্ সূচক ডিএসইএস ৪ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৩৭২ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ১০ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ১৯৪ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ বছর এবং প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ ও লভ্যাংশ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা। ফলে কোম্পানির ব্যবসা দেখে এর শেয়ার থেকে কম সময়ে ভালো মুনাফার আশায় অনেকে বিনিয়োগ করেছেন। এতে শেয়ারদর বৃদ্ধি পাওয়ায় মুনাফায় ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। পরে সেই মুনাফা সংগ্রহ শুরু করেন অনেকে। তাই এ মুনাফা তুলতে গত দুই সপ্তাহ ধরে বিক্রির চাপ বেড়েছে। এর সঙ্গে অনেকে অন্য শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন। তাই এ কেনা-বেচার দুই দিক থেকেই চাপ থাকায় বাজারে অস্থিরতা লক্ষ করা গেছে। তবে কেউ কেউ আবার বিনিয়োগ না করায় লেনদেন কমলেও অন্যরা কেনার কারণে সপ্তাহ শেষে সূচক বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে গত সপ্তাহে আগ্রহ বেশি থাকা বস্ত্র খাতের শেয়ারদর বেড়েছে ১ দশমিক ৭০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সাধারণ বিমা খাতে গত সপ্তাহে দর বেড়েছে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ। এক শতাংশ দর বৃদ্ধি পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল বিবিধ খাতের শেয়ার। এদিকে গত সপ্তাহে শেয়ারদর সবচেয়ে বেশি কমেছে ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে। এ খাতে গত সপ্তাহে ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ শেয়ারদর কমেছে। ১ দশমিক ৯০ শতাংশ শেয়ারদর কমে দ্বিতীয় স্থানে ছিল আইটি খাত। তৃতীয় স্থানে থাকা পাট খাতের শেয়ারদর কমেছে ১ দশমিক ৬০ শতাংশ।
অন্যদিকে গত সপ্তাহে লেনদেনের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে আইটি খাতে। খাতটিতে গত সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৩ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ লেনদেন হয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত।
এদিকে গত সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে, যা ঈদের আগের সপ্তাহ শেষে ছিল ১৪ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন হয়েছে ৭০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৪৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এ সময় তালিকাভুক্ত ২৯৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ৭৭টির, দর কমেছে ৪৮টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭১টি কোম্পানির। এতে কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর পতনের তুলনায় উত্থান ১ দশমিক ৬০ গুণ বেশি হয়েছে।
প্রধান সূচক সিএএসপিআই উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সিএএসপিআই দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৪৯০ দশমিক ১৩ পয়েন্টে। সিএসই৫০ সূচক দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, সিএসইসিএক্স সূচক দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ এবং সিএসআই সূচক দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে এক হাজার ৩১৮ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে, ১১ হাজার ৭৩ দশমিক ৬৮ পয়েন্টে এবং এক হাজার ১৭১ দশমিক ১৬ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই৩০ সূচক দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ এবং সিএসই এসএমইএক্স সূচক ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১৩ হাজার ৪৬১ দশমিক ৪৭ পয়েন্টে এবং এক হাজার ৬৬৮ দশমিক ৪৯ পয়েন্টে।
