নিজস্ব প্রতিবেদক: কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে করা মামলায় মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দু’দিনের হেফাজতে চেয়েছে পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক গোলাম মুক্তার আশরাফ উদ্দিন সাত দিনের রিমান্ড চেয়েছিলেন।
গতকাল রোববার আসামির উপস্থিতিতে শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসী দু’দিন মঞ্জুর করেন বলে গুলশান থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (নারী-শিশু) স্বপন কুমার মণ্ডল জানান।
শুনানিতে পিয়াসার পক্ষে আইনজীবী সোহরাব হোসেন রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তার বিরোধিতা করা হয়। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত পিয়াসার দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
অন্য মামলায় কারা হেফাজতে থাকা পিয়াসাকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোসহ সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আদালত আসামির উপস্থিতিতে শুনানির দিন ৩ অক্টোবর ধার্য করেন।
৬ সেপ্টেম্বর মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর, তার বাবা, মা ও স্ত্রীসহ আটজনকে আসামি করে ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করেন। আদালত পিবিআইকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেনÑআনভীরের বাবা আহাম্মদ আকবর সোবহান, মা আফরোজা, স্ত্রী সাবরিনা, মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, মুনিয়ার বাড়িওয়ালা ইব্রাহিম আহমেদ রিপন, তার স্ত্রী শারমিন ও আনভীরের গার্লফ্রেন্ড সাইফা রহমান মিম।
মামলার আরজিতে বলা হয়, সায়েম সোবহান আনভীর ২০১৯ সালের জুনে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মুনিয়াকে কলেজ হোস্টেল থেকে ৬৫ হাজার টাকার ভাড়া বাসায় নিয়ে আসে। তাকে সাত থেকে আট মাস ধরে ধর্ষণ করে। বিষয়টি জেনে আনভীরের বাবা-মা পিয়াসার মাধ্যমে মুনিয়াকে তাদের বাসায় ডেকে এনে ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে। অন্যথায় তাকে হত্যার হুমকি দেয়। পরে আনভীর বিয়ের আশ্বাস দিয়ে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে তাকে কুমিল্লায় বোনের বাসায় পাঠিয়ে দেন। মুনিয়ার সঙ্গে আনভীর ফোনে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করে বিয়ের আশ্বাস দিতেন।
১ মার্চ আবার বিয়ের প্রলোভন দিয়ে মুনিয়াকে কুমিল্লা থেকে গুলশানে মাসিক এক লাখ ৩০ হাজার টাকার ভাড়া বাসায় নিয়ে আসে আনভীর। বাসায় একা রেখে তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে। এতে মুনিয়া দুই তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এ পর্যায়ে মুনিয়া আনভীরকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। এতে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও বিরোধ সৃষ্টি হয়।
বিষয়টি অন্য আসামিরা জেনে পারিবারিক সুনাম ও সুখ্যাতি রক্ষায় মুনিয়াকে ‘দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার গভীর ষড়যন্ত্রে’ লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে আনভীর মুনিয়াকে কুমিল্লা চলে যেতে বলে। না হলে তার মা তাকে মেরে ফেলবে বলে জানায়। তখন মুনিয়া লাইভে এসে সবকিছু ফাঁস করে দেবে বলে আনভীরকে জানায়। তখন আনভীর মুনিয়াকে বলেন, ‘এত সময় তুই পাবি না। আমি তোকে দেখে নেব।’
নুসরাত জাহান অগিযোগে বলেন, মুনিয়া ঘটনা আঁচ করতে পেরে আসামিদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঢাকা ছেড়ে যশোর পালিয়ে যেতে চায়। এ জন্য সে ২৬ এপ্রিল সকালে দুই দফা বাড়িওয়ালা ও তার স্ত্রীর কাছে গাড়ি চায়। তারা গাড়ি না দিয়ে উল্টো বিষয়টি অন্য আসামিদের কাছে ফাঁস করে দেয়। তখনই সব আসামি পরস্পর যোগসাজশে মুনিয়াকে বাসায় আটকে রেখে হত্যার ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করে এবং ‘কিলিং মিশন দিয়ে মুনিয়াকে ধর্ষণোত্তর হত্যা’ করে তাদের উদ্দেশ্যে হাসিল করে।
এ মামলায় রিমান্ডে যাওয়া পিয়াসাকে গত ১ আগস্ট রাতে বারিধারার বাসা থেকে মদ ও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। পরদিন গুলশান থানার মামলায় তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর গুলশান, ভাটারা ও খিলক্ষেত থানার পৃথক তিন মামলায় তার আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। কয়েক দফা রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর ভাটারা থানার মামলায় পিয়াসার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি পুলিশ। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ভাটারা ও খিলক্ষেত থানায় দায়ের করা মাদকের পৃথক দুই মামলায় পিয়াসার জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকায় মুক্তি মেলেনি পিয়াসার।