আব্দুল্লাহপুর। মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার একটি গ্রাম। টঙ্গীবাড়ির একেবারে উত্তর সীমান্তে এর অবস্থান।
এ গ্রামের নামেই আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের নামকরণ করা হয়েছে। গ্রামটি অতি প্রাচীন। এ নামটি একজন মুসলমান সেনাপতি শেখ আব্দুল্লাহর নামানুসারে করা হয়েছে। তিনি কোন সুলতান বা সম্রাটের সেনাপতি ছিলেন তা জানা নেই। তবে আব্দুল্লাহপুর গ্রামের একেবারে দক্ষিণে পাশের একটি প্রাচীন মসজিদের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। মসজিদটির আয়তন একেবারেই ছোট। এক গম্বুজবিশিষ্ট। এ মসজিদের
পূর্ব-দক্ষিণ কোণে দে বাড়ির মাটি খননের সময় একটি প্রাচীন কবর আবিষ্কার হয়। কেউ কেউ এ কবরটি শেখ আব্দুল্লাহর কবর বলে মনে করেন। কবরটি আয়তনে অনেক বড়। আব্দুল্লাহপুরের এ প্রাচীন মসজিদটি সিএস পর্চায় চিহ্নিত আছে।
আব্দুল্লাহপুর গ্রামটি কত প্রাচীন? কেউ মনে করেন, এ নামটি বল্লাল সেন যুগের। আবার কারও কারও অভিমত, আব্দুল্লাহ তুর্কি সেনাপতি, তার নামানুসারেই গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে।
আব্দুল্লাহপুর নামটি সুলতানি অথবা মোগল আমলের। আব্দুল্লাহপুরের বাসিন্দা পণ্ডিত শ্যামসুন্দর গোপ (৭০) জানান, আব্দুল্লাহপুরের প্রাচীন নাম জোয়ার খোদেদাদপুর ওরফে আব্দুল্লাহপুর। তুর্কি সেনাপতি আব্দুল্লাহর নামানুসারে এ নাম দেওয়া হয়েছে। এখানে একটি বাজার রয়েছে। আরও রয়েছে একটি হাইস্কুল, একটি মাদরাসা, একটি গ্রন্থাগার ও দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি মসজিদ। প্রসঙ্গত, ১৯৪৬ সালে গ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ গ্রন্থাগারে বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-ই-খুদা, পল্লীকবি জসিমউদ্দীন ও ভারতের ড. মহানাম ব্রহ্মচারী এমএ এসেছিলেন।
গ্রামের পূর্বে মিরকাদিম বন্দর। ১৫৬৯ খ্রিষ্টাব্দে এখানের টেঙ্গর নামক স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন সুলেমান খান কররানি। এ মসজিদের শিলালিপিতে মিয়া আব্দুল্লাহ নামের একজন শাসকের নাম পাওয়া যায়। খুব সম্ভবত মিয়া আব্দুল্লাহর নামানুসারেই আব্দুল্লাহপুর গ্রামের নাম হয়েছে। গ্রামটি ১৫৪৫ থেকে ১৫৫৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এখানকার প্রাচীন কয়েকটি বাড়ির ভেতরের নকশা মোগল যুগের বলে ধারণা করা হয়। এ গ্রামে ১১৭৮ খ্রিষ্টাব্দে মহারাজ বল্লাল সেনের সঙ্গে বাবা আদম শহিদের (রহ.) যুদ্ধ হয়েছিল।
গ্রামের দক্ষিণ পাশে একটি পাকা ব্রিজ রয়েছে। ব্রিজটির নাম এএমএ রহিম ব্রিজ। এএমএ রহিম মুন্সীগঞ্জের সাবডিভিশনাল অফিসার ছিলেন। তিনি এ ব্রিজটি ১৯৬৪ সালের ২৪ জুলাই নির্মাণ করেন। যে রাস্তাটি আব্দুল্লাহপুর বাজার থেকে টঙ্গীবাড়ি পর্যন্ত চলে গেছে, সে রাস্তাটির নাম এমএ রহিম রোড। সব মিলিয়ে আব্দুল্লাহপুর একটি প্রাচীন মুসলিমনগর ছিল এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
শেখ মোহাম্মদ রতন, মুন্সীগঞ্জ