Print Date & Time : 1 July 2025 Tuesday 11:14 pm

মুন্সীগঞ্জে গ্যাস সংকট প্রকট

শেখ মোহাম্মদ রতন, মুন্সীগঞ্জ: গত পাঁচ মাস ধরে মুন্সীগঞ্জে গ্যাস সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম, বিভিন্ন শিল্পকারখানায় চোরাই লাইনে গ্যাস ব্যবহার এবং একটি পাইপলাইনের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় গ্যাস সরবরাহের কারণে মুন্সীগঞ্জে গ্যাস সংকট প্রকট হয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। এর ফলে গৃহিণীরা এখন গ্যাসের চুলা ছেড়ে খড়ি বা কেরোসিনের চুলায় রান্নাবান্না করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে একদিকে আবাসিক গ্রাহকদের আর্থিক খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন গৃহিণীরা। শহর ও শহরতলির অনেক বাড়িতে মধ্যরাতে রান্না হচ্ছে।

মুন্সীগঞ্জ শহর ও শহরাঞ্চলের হাজার হাজার পরিবারের এ গ্যাস সংকট দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চলে আসছে। এ নিয়ে মুন্সীগঞ্জবাসী ক্ষোভ বেড়ে চলেছে। এর আগে গ্যাসের দাবিতে মুন্সীগঞ্জ শহরবাসী মানববন্ধনসহ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছিল। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বরং গ্যাস সরবরাহের আরও অবনতি হয়েছে। এ নিয়ে মুন্সীগঞ্জবাসীর ক্ষোভ যে কোনো সময় চরমে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

এমন আশঙ্কার কারণে ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর ও ৩০ ডিসেম্বর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি ও জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) ও জেলা তথ্য কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। এমনকি ঠিক মতো গ্যাস সরবরাহ করতে না পারলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও নির্দেশনা দিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার। এর পরই গত ৩১ ডিসেম্বর তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পরিচালক (অপারেশন) বরাবর আন্তঃবিভাগীয় নোট দাখিল করেন তিতাস গ্যাসের মুন্সীগঞ্জ কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মেছবাহ উদ্দিন আহমেদ। দাখিল করা চিঠিতে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের ক্ষোভ প্রকাশের কথা উল্লেখ করে মুন্সীগঞ্জে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চার মাস ধরে প্রতিদিন রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কিছুটা গ্যাস পাওয়া গেলেও দিনে গ্যাসের অভাবে চুলা জ্বালাতে পারছেন না গৃহিণীরা। তাই বাধ্য হয়ে তারা রাতে না ঘুমিয়ে দিনের রান্না আগের দিন রাতে করে রাখছেন।

শহরের মধ্য কোটগাঁও এলাকার চাকরিজীবী গৃহিণী জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, গ্যাসের অভাবে রান্না করতে চুলা জ্বালানো সম্ভব হয় না। চুলা চালু করার কিছু সময় পর বিন্দু পরিমাণ গ্যাস পাওয়া গেলে নিভু নিভু আকারে চুলা জ্বালিয়ে রান্নাবান্না করতে হয়।

বাগমামুদালী পাড়ার স্কুলশিক্ষিকা খালেদা আক্তার নীলা দীর্ঘদিনের এ সমস্যা নিরসনে কোনো উদ্যোগ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

অ্যাডভোকেট সুজন হায়দার জনি জানান, একদিকে গ্যাসলাইনে গ্যাস সরবরাহ নেই। তার মধ্যে তরল গ্যাস সিলিন্ডারের দাম রাতারাতি বেড়েই চলেছে। তাই গ্যাসের দাবিতে হতে হবে প্রতিবাদ। এ রকম অনেকেই চরম বিক্ষোভ প্রকাশের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এমনকি প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজনের নানা পরিকল্পনাও ইতোমধ্যে চলছে।

মুন্সীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক শহীদ-ই-হাসান তুহিন গ্যাস সংকটের তীব্র প্রতিবাদ করে জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে সঠিকভাবে গ্যাস বণ্টন না করার কারণে বছরের পর বছর ধরে মুন্সীগঞ্জে গ্যাসের এ সংকট লেগেই আছে। রেশনিং সিস্টেমে সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত গৃহস্থালিতে এবং রাতে ইন্ডাস্ট্রিজে যদি গ্যাস বণ্টন করা যেত তাহলে এ সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যেত। আমাদের কাছ থেকে প্রতি মাসে গ্যাস বিল ঠিকই আদায় করা হচ্ছে। অথচ সঠিকভাবে গ্যাস বণ্টন না করার কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। এ ঘটনার জন্য আন্দোলন করা উচিত।

এ প্রসঙ্গে তিতাস গ্যাসের মুন্সীগঞ্জ কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মেছবাহ উদ্দিন আহমেদ জানান, মুন্সীগঞ্জে গ্যাসের চাহিদা দুই হাজার ৩৪৬ মিলিয়ন কিউবিক ফিট (এমএমসিএফডি)। কিন্তু সরবরাহ হচ্ছে এক হাজার ৮০০ এমএমসিএফডি। চাহিদা অনুযায়ী ঘাটতিই রয়েছে ৫৪৬ মিলিয়ন কিউবিক ফিট। তাই গ্যাস সংকট থেকেই যাচ্ছে। একটি পাইপ লাইনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে গ্যাস সরবরাহ হয়। নারায়ণগঞ্জের চাহিদা মেটানোর পর পাইপলাইনে গ্যাস না থাকায় মুন্সীগঞ্জের গ্রাহকরা গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছেন না। এক পাইপলাইনে দুই জেলায় গ্যাস সরবরাহ করাই মুন্সীগঞ্জে গ্যাস সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ। সে সঙ্গে যুক্ত রয়েছে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহে ঘাটতি। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্টসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানায় চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় মুন্সীগঞ্জে গ্যাস সংকট আরও প্রকট হয়েছে। তাই নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের গ্যাস সরবরাহ লাইন পৃথক করা না হলে মুন্সীগঞ্জের গ্যাস সংকট নিরসন সম্ভব নয় বলেও মনে করছেন এ কর্মকর্তা।