মুন্সীগঞ্জে বিস্তীর্ণ জমিতে আলু রোপণ শুরু

শেখ মোহাম্মদ রতন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আলু রোপণের উৎসব শুরু হয়েছে। বর্ষার পানি নেমে যাওযার পর নভেম্বরের শুরু থেকেই জমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষে কৃষকরা নিজ নিজ জমিতে আলু আবাদে নেমে পড়েছেন। আর কৃষকের জমিতে আলু আবাদে যুক্ত হয়ে জেলার বিস্তীর্ণ জমিতে আলু রোপণ করতে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত হাজার হাজার পুরুষ ও নারী শ্রমিকের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে গ্রামাঞ্জলের হাট-বাজার ও কৃষকের জমিতে। তারা রোজ হিসেবে অথবা চুক্তি হিসেবে কৃষকের জমিতে আলু রোপণ কাজে যুক্ত হতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। নভেম্বরে শুরু হওয়া আলু রোপণ কাজে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যস্ত থাকবেন কৃষককুল ও শ্রমিকরা। একই সঙ্গে বাড়ির আঙিনায় কৃষকদের সহযোগিতায় বাড়ির গৃহিণীরাও নানা কাজে যুক্ত হয়েছেন।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ৭৫ থেকে ৮০ হাজার কৃষক পরিবার আলু আবাদের সঙ্গে জড়িত। তাই পরিবারগুলো এখন আলু রোপণ করে লাভের আশায় নতুন স্বপ্ন বুনছে। আলুর বাম্পার ফলন করেই আগামীর অর্থনৈতিক ভিত তৈরির স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সদর উপজেলার চরাঞ্চলের চরকেওয়ার, বাংলাবাজার, মোল্লাকান্দি, শিলই ও আধারা, মহাকালী, বজ্রযোগিনী, রামপাল ইউনিয়নে এবং টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আলদী, ধামারণ, কাঠাদিয়া, শিমুলিয়া, যশলং, ধীপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে এবং সিরাজদিখান, লৌহজং, গজারিয়া ও শ্রীনগর উপজেলা জুড়েও আলু রোপণ কাজে কৃষকের ব্যস্ততার দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে। তাদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বিভিন্ন জেলার পুরুষ-নারী শ্রমিক ও কৃষকের পরিবারের সদস্যরাও।

সদর উপজেলার সাতানিখিল গ্রামের আইয়ুব মিয়ার স্ত্রী গৃহবধূ সাজেদা আক্তার জানান, এবারও তারা জমিতে আলু রোপণ করছেন। এ জন্য কৃষক স্বামী আইয়ুব মিয়াকে সাহায্য করতে নিজ বাড়ির উঠানে বসেই আলুবীজ কেটে দিচ্ছেন। প্রতিবেশী গৃহবধূরাও মজুরি পাওয়ার আশায় এ কাজে যুক্ত হয়েছেন।

টঙ্গিবাড়ীর ধামারন গ্রামের বাবুল মিয়ার স্ত্রী গৃহবধূ জুলেখা বেগম জানান, এবার তারা ৬০ শতাংশ জমিতে আলু রোপণ করছেন। এ জন্য কৃষক স্বামীকে সাহায্য করতে নিজ বাড়ির উঠানে বসেই আলুবীজ কেটে দিচ্ছেন। প্রতিবেশী গৃহবধূরাও মজুরি পাওয়ার আশায় এ কাজে যুক্ত হয়েছেন।

সিরাজদিখান উপজেলার বালুরচর গ্রামের কৃষক আলী মিয়া বলেন, বালুরচর ইউনিয়নটি উচু থাকায় আমরা আগাম আলু উৎপাদনে আলু আবাদ করি। এ বছর ৬০ শতাংশ জমিতে আলু চাষ করেছি।

একাধিক কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলু আবাদের মৌসুম এলেই রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নিলফামারী, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রামসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শ্রমিকরা আলু রোপণ কাজে যুক্ত হতে প্রতিদিন সকালে জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে জড়ো হচ্ছেন। কৃষকের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পর তারা আলু রোপণে জমিতে কাজ শুরু করে দিচ্ছেন।

রংপুর জেলা থেকে আগত শ্রমিক আব্বাস মিয়া জানান, কোথাও চুক্তি অনুযায়ী আবার কোথাও দিনব্যাপী মজুরি নিয়ে তারা কৃষকের জমিতে আলু রোপণকাজ করছেন। রোপণকাজ শেষে ফিরে যাওয়ার পর আবার আলু উত্তোলনের সময় তারা আবারও আসবেন মুন্সীগঞ্জ জেলায়। কৃষকরা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেয়ায় তারাও খুশি জোয়ার নিয়ে প্রখর রোদের তাপে আলু রোপণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. আব্দুল আজিজ জানান, এ মৌসুমে জেলায় প্রায় ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উল্লেখিত জমিতে আলু রোপণ হলে ১০ লাখ ৯৭ হাজার ১৪৭ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নভেম্বরের শুরুতেই সদর, সিরাজদিখান, লৌহজং, টঙ্গিবাড়ী, গজারিয়া ও শ্রীনগর উপজেলা বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আলু আবাদের উৎসব শুরু হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি আলু আবাদ হচ্ছে জেলা সদরেই।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০