শেখ মোহাম্মদ রতন, মুন্সীগঞ্জ: শীতের প্রভাব পড়তে শুরু করায় মুন্সীগঞ্জে বাড়ছে শীত ও ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ। বিশেষ করে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আগাম শীতের প্রভাবে চলতি অক্টোবরেই নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে এ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ১১ জন শিশু। এদিকে এ বছর করোনার কারণে শীত আরও বাড়লে রোগীর সংখ্যাও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, করোনা ও শীতজনিত রোগের চিকিৎসায় বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনও পুরোপুরি প্রস্তুতি নেই মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে। এতে হাসপাতালটিতে আসা চিকিৎসা প্রত্যাশীদের পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলা হাসপাতালটির স্বাস্থ্য বিভাগে পর্যাপ্ত স্যালাইন মজুদ থাকলেও বাড়তি চাহিদার জন্য পর্যাপ্ত ওষুধের জোগান নেই। ফলে রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে।
এদিকে আগামী এক মাসের মধ্যে হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের জন্য সিলিন্ডার বসানোর জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ কাজ শেষ হলে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা হবে হাসপাতালে। এতে শ্বাসকষ্টের রোগীদের দ্রুত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা যাবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শীত মৌসুমে বেশি সমস্যায় পড়ে শিশু ও বৃদ্ধরা। অথচ হাসপাতালটিতে শিশু ওয়ার্ডের জন্য আছেন মাত্র একজন ডাক্তার। আর কয়েক হাজার মানুষের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালটিতে প্রায়ই রাতে কোনো চিকিৎসক থাকে না বলে তথ্য মিলেছে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. প্রণয় মান্না দাস বলেন, ‘শীতে শিশুদের বিশেষ করে নবজাতকদের শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া জাতীয় রোগ বৃদ্ধি পায়। আমাদের ১০০ শয্যার হাসপাতালে যতটুকু ব্যবস্থা আছে তা দিয়ে সাধ্যমতো চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। তবে শিশুদের অভিভাবকরা যদি একটু চেষ্টা করেন, তবে রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা কমবে। শিশুদের পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র পরিধান করাতে হবে।’ একই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিনযুক্ত খাদ্য খাওয়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
মুন্সীগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার আবুল কালাম বলেন, ‘শীতে প্রতি বছরই স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মিত পদক্ষেপ ও উদ্যোগ থাকে। জেলা হাসপাতালে এর বাইরে কিছু করা যায় না। শীতে পর্যাপ্ত ওষুধের জন্য একটি চাহিদাপত্র করা হয়েছে। শীত বাড়ার মধ্যেই সেসব সংগ্রহ করা হয়ে যাবে। সেন্ট্রাল অক্সিজনের ব্যবস্থাও হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিশুদের জন্য কনসালট্যান্ট একজন রয়েছেন, তিনি দেখবেন। এর বাইরে কোনো বিশেষ ব্যবস্থা আপাতত নেই। নতুন ভবন চালু হলে তবে সেখানে শিশুদের আলাদা কিছু করা যাবে। সব রোগীর জন্য স্যালাইন ও প্রতি শয্যায় কম্বল প্রদান করা হবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অন্য বছরের চেয়ে এ বছরের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। এ বছর শীতে করোনার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। এর মধ্যেই জেলায় সভা করে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হাসপাতালের বর্তমানে ৫০ শয্যার সঙ্গে ২০টি শয্যা করোনা ইউনিটে যোগ করা হবে। শ্বাসকষ্ট নিয়ে কেউ ভর্তি হলে তাকে প্রথমে আইসোলেশনে রাখা হবে। কারণ শ্বাসকষ্টের সব রোগী করোনায় আক্রান্ত থাকে না।
পরবর্তী সময়ে করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ হলে করোনা ইউনিটে পাঠানো হবে। সিভিল সার্জন বলেন, ‘শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে আমাদেরও রোগ প্রতিরোধে সচেতন থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।’ এতে বেশি সুরক্ষিত থাকা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।