মুমিনুলের অভিমান নাকি বোধদয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক : গুঞ্জনটা ছিল গত কিছুদিন ধরেই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দেশের মাঠেও যখন সুপার ফ্লপ তিনি, তখনই অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় মুমিনুল হকের ভাগ্য। ব্যাটে-নেতৃত্বে দুটোই যখন তলানিতে তখন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হলো তাকে। টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি ছাড়তে চাইছেন এই ব্যাটসম্যান। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে এই কথা জানিয়ে এসেছেন তিনি। 

টেস্ট অধিনায়ক ইস্যুতে আলোচনা করতেই স্বস্ত্রীক মুমিনুল যান পাপনের গুলশানস্থ বাসায়। তখনই তিনি জানিয়ে আসেন টেস্ট অধিনায়ক থাকতে চান না। বিসিবি সভাপতি তাকে অধিনায়কত্ব ছাড়ার কথা বলেননি। তিনি নিজেই নিয়েছেন এই সিদ্ধান্ত। এরপরই বোর্ডের তরফ থেকে জানা গেছে-বৃহস্পতিবার বোর্ড সভা শেষে এনিয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। ইঙ্গিত স্পষ্ট আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেই টেস্টে দেখা যেতে পারে নতুন অধিনায়ক।

বুধবার আধা ঘন্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে মুমিনুল অবশ্য জানিয়ে দিলেন, কোন অভিমান থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেননি তিনি। বলেন, ‘দেখুন, আমি আসলে জিনিসটা চাচ্ছি না। ব্যক্তিগতভাবে আসলেই চাচ্ছি না। না এটা অভিমান থেকে নয়।’

চেহারায় ছিল ক্লান্তির চাপ নিয়েই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বোর্ড সভাপতির বাসায় যান মুমিনুল। চারপাশ থেকে সমালোচনায় যেন হাপিয়েও উঠেছিলেন। প্রায় ৩০ মিনিটের বৈঠক শেষে বের হয়ে সংবাদমাধ্যমকে নিজের অধিনায়কের পদে না থাকার সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।

এরপর গণমাধ্যমের সামনে এসে মুমিনুল হক জানিয়ে দিলেন, ‘আমি বলেছি, অধিনায়ক হিসেবে আমি দলে অবদান রাখতে পারছি না। আমার কাছে মনে হয় এই মুহূর্তে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া উচিৎ। আমি তো বলে আসছি এখন ওনারা কী সিদ্ধান্ত নেয় ওনাদের ব্যাপার। আপাতত আমি চাচ্ছি ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দিতে, এটা আমার জন্য ভালো। সামনে বোর্ড মিটিং আছে, ওখানে ওনারা সিদ্ধান্ত নেবেন।’

সমালোচনা কিংবা কারও ভয়ে এটা করেননি মুমিনুল। এমনটাও বলে দিলেন, ‘কারও ভয়ে নয়। দেখেন যখন আপনি ভালো খেলবেন দল খারাপ করলেও মোটিভেট করতে পারবেন। আমিও ভালো খেলতে পারছি না, দলও ভালো করছে না। এই সময়ে অধিনায়কত্ব করা খুবই কঠিন।’

তবে এটা ঠিক চাপ আর নিতে পারছিলেন না তিনি। সফলতাও যে নেই তার। বাংলাদেশ টেস্ট দলকে ১৭ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে জিতেছেন মাত্র ৩টিতে। ১২টি হারের সঙ্গে ড্র ২টি। সঙ্গে ব্যাট হাতে ব্যর্থতা তো আছেই। সর্বশেষ ১০ ইনিংসে মাত্র ২ বার দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেন মুমিনুল, যেখানে সর্বোচ্চ রান ৩৭। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের দুই ইনিংসসহ সর্বশেষ ৭ ইনিংসেই ফিরেন দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগে। এই ৭ ইনিংসে তার স্কোর- ০, ৯, ২, ৫, ৬, ২, ০। 

পরিসংখ্যান দেখুন-অধিনায়ক হওয়ার আগে মুমিনুলের ব্যাটিং গড় ছিল ৬৭ ইনিংসে ৪১.৪৮। অধিনায়ক হওয়ার পর গত ৩১ ইনিংসে গড় দাঁড়িয়েছে ২৯.৪২! ৫৩ টেস্ট ক্যারিয়ারে মোট রান ৩৫২৫। অধিনায়ক হওয়ার পর রান করেছেন ৯১২। এই ব্যর্থতার পর সরে দাঁড়ানোর বোধদয়ই বুঝি হলো মুমিনুলের।

এ অবস্থায় বোর্ডও নতুন টেস্ট অধিনায়কের সন্ধানে। যদি সাকিব আল হাসান রাজি হয়ে যান তবে সোনায় সোহাগা। সাদা পোশাকে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো তারচেয়ে যোগ্য ক্রিকেটারটি আর কেউ নেই!

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০