ক্রীড়া প্রতিবেদক: সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞা দেশের ক্রিকেটে আলোচিত ঘটনার একটি। ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব গোপন করায় আইসিসি এক বছর সব ধরণের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করেছিল তাকে। সেই সময় টেস্টের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। তখন তড়িগড়ি করেই নতুন অধিনায়ক করা হয় মুমিনুল হককে। ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’ বিলে হয়তো তার প্রতি বাড়তি একটা নির্ভরতা ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে দ্বায়িত্ব নিয়ে শুধু হতাশাই সঙ্গী হয়েছে তার।
কথায় আছে-ক্যাপ্টেন লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট! ঠিক তাই একজন অধিনায়ককে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিতে হয়! কিন্তু সেই কাজটা ঠিকঠাক করতে পারছেন না মুমিনুল হক। তার ব্যাট কথা বলছে না। দলও নেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায়! শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরে মাঠে সিরিজ হেরে ভয়াবহ চাপে বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক। নেতৃত্বও হারাতে পারেন মুমিনুল!
অধিনায়কত্ব নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। মাঠে তার কিছু সিদ্ধান্ত দেখে বিশ্লেষকরা মুমিনুলের ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে ফের কথা তুললেন। ব্যাটে রান নেই এটাও বড় হয়ে উঠেছে। গত শুক্রবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ১০ উইকেটে জিতেছে শ্রীলঙ্কা। ২ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে জিতল সফরকারীরা।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ হারের পর মুমিনুল কাঠগড়ায়। ছুটির দিনের বিকেলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়ে রাখলেন, মুমিনুলের কি চিন্তা করছে সেটা জানার অপেক্ষায় তারা। মানে মুমিনুল স্বেচ্ছায় নেতৃত্ব থেকে সরে যেতে চাইলে এবার মনে হচ্ছে আটকাবে না বোর্ড!
এখন ফর্মে নেই অধিনায়ক। এমনিতে অফ ফর্মে থাকলে নেতৃত্বের ওপরও একটা বড় চাপ আসে, এ অবস্থায় বিসিবি কি ভাবছে? এমন প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে নাজমুল হাসান পাপন বলছিলেন, ‘একটা অধিনায়ক যখন রান করতে পারে না ওর উপর চাপটা কিন্তু আরও অনেক বেশি। আমার ধারণা মুমিনুল প্রচণ্ড মানসিক চাপে আছে। আজ আমার সাথে সংক্ষিপ্ত আলাপ হয়েছে, আমি ওকে বলেছি কাল অথবা পরশু ওর সাথে বসব। একটু খোলেমেলা কথা বলে দেখি ওর মাথায় কি আছে, ও কি চিন্তা করছে এই ব্যাপার নিয়ে।’
মুমিনুল টেস্টে ‘বাই চান্স ক্যাপ্টেন।’ হঠাৎ করেই দ্বায়িত্ব পান তিনি। সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞায় তাকে করা হয় অধিনায়ক। ভারতের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ দিয়ে হয় শুরু। যেখানে দুই টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে হার দেখেছে টাইগাররা।
তারপর অবশ্য লড়ে গেছেন। নেতৃত্ব যাই হোক ব্যাট কথা বলেছে। তবে এখন ভয়াবহ বাজে অবস্থায় তিনি। সবশেষ ১০ ইনিংসে করেছেন মাত্র ৭৪ রান। ৮ ইনিংসেই দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেননি। তিনটিতেই মেরেছেন ডাক! নাজমুল হাসান পাপন বলছিলেন,
‘সো ফার মুমিনুলের অধিনায়কত্ব নিয়ে আমরা খুব একটা চিন্তিত নই। সমস্যাটা হচ্ছে ওর ব্যাটিং নিয়ে, ও রান পাচ্ছে না। এটা তো চিন্তার বিষয়। একজন অধিনায়ক যখন রান করে না, তখন ওর কী মানসিক চাপটা পড়ে তা চিন্তা করেন। তাই আমরা এখন শুধু আশা করতে পারি যে ও তাড়াতাড়ি রানে ফিরুক।’
পরিসংখ্যান দেখুন-অধিনায়ক হওয়ার আগে মুমিনুলের ব্যাটিং গড় ছিল ৬৭ ইনিংসে ৪১.৪৮। অধিনায়ক হওয়ার পর গত ৩১ ইনিংসে গড় দাঁড়িয়েছে ২৯.৪২! ৫৩ টেস্ট ক্যারিয়ারে মোট রান ৩৫২৫। অধিনায়ক হওয়ার পর রান করেছেন ৯১২।
মুমিনুল এখন অব্দি নেতৃত্ব দিয়েছেন ১৬ টেস্টে। যেখানে জিতেছেন মাত্র ৩টিতে। হার ১১ টেস্টে। ড্র দুটি। আর সাকিব আল হাসান ১৪ টেস্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে জিতেছেন তিনটিতে। হার ১১ টেস্টে।