Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:30 pm

মুরগি ও মাছের দামে স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বাজারগুলোয় মুরগি ও মাছের দাম কমেছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়, যা একমাস আগেও ছিল ২০০ টাকার মধ্যে। অন্যদিকে বাজারে ইলিশ মাছের সঙ্গে কমেছে অন্যান্য মাছের দাম। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় দাম কম থাকায় মুরগির মাংস ও মাছের দোকানগুলোয় ভিড় দেখা গেছে। গতকাল শুক্রবার সকালে সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার এসব তথ্য জানা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাড্ডা এলাকার প্রায় প্রতিটি দোকানেই ব্রয়লার মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজিতে। যদিও কেউ কেউ ১৬৫ টাকা দাম চাচ্ছে, কিন্তু ক্রেতার মনোভাব বুঝে আবার ১৬০ টাকা করেই বিক্রি করছেন তারা। শুধু ব্রয়লার নয়, পাকিস্তানি লেয়ার, সোনালি জাতের মুরগির দামও অনেকটা কমে এসেছে। প্রতি কেজি সোনালি জাতের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা, যা একমাস আগেও ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা কেজি। এ ছাড়া বাজারে পাকিস্তানি লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা কেজিতে।
এদিকে ব্রয়লার মুরগির দাম কমে আসায় স্বস্তি মিলেছে মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতে। শরিফুল ইসলাম নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, আমরা যারা গরিব মানুষ, আমরা চাইলেই গরুর মাংস খেতে পারি না। মুরগির মাংসের দামটা নাগালে থাকলে এটাই হয়ে ওঠে আমাদের গরুর মাংস। কিন্তু দাম বেড়ে গেলেই আর ঠিকমতো খাওয়া হয়ে ওঠে না।

তিনি বলেন, ব্রয়লার আজকে ১৬৫ টাকা দিয়ে কিনেছি, আমার কাছে মনে হচ্ছে এটাই এই বছরে সর্বনিম্ন দাম। সবসময় এই দামের মধ্যে থাকলেই আমরা খুশি।
সাব্বির আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যারা মেসে থেকে পড়াশোনা করি, আমাদের অনেকটাই মুরগির মাংসের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। কিছুদিন আগে দামটা বেড়ে গিয়েছিল, আমরাও একটু অস্বস্তিতে ছিলাম। এখন দেখছি আবার দামটা কমেছে। আমি মনে করি, এখনের দামটাই ঠিক আছে। ব্যবসায়ীরা চাইলেই এই দামে বিক্রি করতে পারে, কিন্তু সুযোগ বুঝে তারা গণহারে পকেট কাটতে শুরু করে।
দাম প্রসঙ্গে মুরগির মাংস বিক্রেতা মনসুর আলী বলেন, গত কয়েকদিনে ব্রয়লার মুরগির দামটাও একটু কম। মাস দুয়েক আগে একবার ১৭০ টাকা পর্যন্ত আসছিল, কিন্তু এরপর আবার দামটা বেড়ে যায়। গত মাসেও ২০০ টাকার বেশি ছিল, আজ আবার ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা করে বিক্রি করছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি কম দামে কিনতে পারি, তাহলেই কমে বিক্রি করতে পারি। দামটা কম থাকলে আমাদের জন্যও ভালো, কারণ বেশি দাম থাকলে বিক্রিও খুব সীমিত হয়। এখন দাম কম, বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর।

ইলিশের ভরা মৌসুম থাকবে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে। মৌসুমের শুরু থেকেই বাজারে সরবরাহ বেড়েছে ইলিশের। ফলে দাম আগের তুলনায় সামান্য কম। যদিও এই দাম পুরোপুরি স্বস্তিদায়ক নয় স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য। গতকাল ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, যেটুকু কমেছে ইলিশের দাম তাতেই খুশি অনেক ক্রেতা। বিক্রিও বেড়েছে বলছেন, বিক্রেতারা। এদিকে ইলিশের দামের প্রভাবে অন্যান্য মাছের দামও কিছুটা কমেছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক-দেড় কেজির যে আকারের ইলিশ আগে ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল এখন সেগুলো ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারভেদে দামের ভিন্নতাও রয়েছে। কয়েকদিন আগে ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশের দাম ছিল ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা, যা এখন প্রায় ২০০ টাকা কমে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকার মধ্যে এসেছে। তবে একই সাইজের আবার নদীর ইলিশের দাম বেশি। কারণ সাগরের ইলিশের সরবরাহ বাড়লেও নদীর মাছ কমেছে।

আগে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার নিচে ছোট সাইজের (২০০ থেকে ৪০০ গ্রাম) ইলিশ পাওয়া যেত না। এখন বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে ছোট ইলিশ মিলছে। রামপুরা বাজারে আবার ইলিশের দাম কাওরান বাজার থেকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা কেজিপ্রতি বেশি। তবে এখানেও তুলনামূলকভাবে একই হারে দাম কমেছে জানিয়ে বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, দুই থেকে তিন দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি ইলিশের দাম প্রায় ২০০ টাকা কমেছে।

তিনি বলেন, আসলে সরবরাহ বাড়ার কারণে দাম কমেছে। আর সেই তুলনায় ক্রেতা কম। মাসের শেষ দিক, আবার অন্যান্য অনেক কারণে অনেকের হাতে টাকা নেই।
মালিবাগ বাজারে ২ কেজি ওজনের বড় ইলিশ ২০০০ হাজার টাকা দাম হাঁকছেন বিক্রেতা আলম। তিনি বলেন, এখন বাজারে ইলিশের চড়া দাম নিয়ে হা-হুঁতাশ নেই। দামের উত্তাপ খানিকটা কমেছে। সরবরাহ ঠিক থাকলে আরও কমবে। তিনি বলেন, তারপরও অনেকে দাম নিয়ে খুশি নয়। তারা আরও দাম কমবে, সে আশায় অপেক্ষা করছেন। খুচরা বাজারে এ মাছের দাম আগের সপ্তাহের চেয়ে দুই থেকে ৩০০ টাকা কমেছে।

তারপরও এখন ভরা মৌসুমেও পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা না পড়ার কথা বলছেন কিছু ব্যবসায়ী। সরবরাহ অন্যান্য বছর আরও বেশি ছিল বলে জানান তারা। মাঝে কয়েক বছর ইলিশের দাম আরও নিচে নেমেছিল।
ক্রেতারা বলছেন, ইলিশের সরবরাহ গত সপ্তাহের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। এতে খুচরা বাজারে কিছুটা কমলেও দাম পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। ইলিশের সরবরাহ আরও বেশি হলে দামে স্বস্তি ফিরবে বলে মনে করেন তারা।
আবু সাইদ নামের এক ক্রেতা বলেন, দাম কমেছে আগের চেয়ে, তবে আরও কমা দরকার যাতে সবাই কিনতে পারে। এক কেজি মাছ হাজার টাকার মধ্যে হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, এবার ভারতে মাছ রপ্তানি হবে না শুনেছি টিভিতে। যে কারণে দাম কমার অপেক্ষায় আছে সবাই। কিন্তু তাদের প্রত্যাশা এখনও পূরণ হয়নি। ইলিশের দাম কমলেও বাজারে সবজি ও অন্যান্য পণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা দরে।