ক্রীড়া প্রতিবেদক: গত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) বরিশাল বুলসের অধিনায়ক ছিলেন মুশফিকুর রহিম। নিজে জ্বলে উঠলেও দলকে কাক্সিক্ষত সাফল্য এনে দিতে পারেননি তিনি। যে কারণে দলটির অন্যতম মালিক আবদুল আউয়াল চৌধুরী ভুলু এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব নিয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছেন। তাতে বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়কের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে মনে করেন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার চৌধুরী মল্লিক। এ ঘটনায় মুশফিকের পাশে দাঁড়িয়েছে বিপিএল গভর্নর কাউন্সিল ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবি।
গতকাল মিরপুর শের-ই-বাংলায় আউয়াল চৌধুরী ভুলুর দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন মুশফিক। সে সময় তিনি অনেকটা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। এ সময় তার কণ্ঠরোধ হয়ে আসছিল বারবার। চোখ ছলছল করছিল। একপর্যায়ে সংবাদ সম্মেলন শেষ না করেই তিনি সংবাদ সম্মেলন থেকে বের হন। তার আগে বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক বলেন, ‘গত৬ ১২ বছর ধরে আমি জাতীয় দলে খেলছি। আমার সম্পর্কে এমন অভিযোগ এর আগে কখনও ওঠেনি। তিনি আমাকে খারাপ খেলোয়াড় বলতে পারেন; কিন্তু আমাকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলতে পারেন না। আমি আশা করবো, মল্লিক ভাইয়েরা বিষয়টা দেখবেন। আমি তাদের জানিয়েছি। আজ আমার সঙ্গে হয়েছে, সামনে যে অন্য কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গে হবে না, তার গ্যারান্টি কী? এটুকু সম্মান তো একজন খেলোয়াড় পেতেই পারেন।’
ব্যাপারটি যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছে বিসিবি। গতকাল বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আউয়াল চৌধুরীকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে মুশফিকের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে তাকে। আর্থিক জরিমানাও করা হতে পারে বুলস মালিককে।
সব সময় একজন পরিশ্রমী ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। অনুশীলনে বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ককে দেখা যায় সিরিয়াস। সবার প্রিয় তিনি। কিন্তু তাকে নিয়ে হঠাৎ করেই কেন বরিশাল বুলসের মালিক এমন অনাকাক্সিক্ষত মন্তব্য করেছেন, তা এখনও জানা যায়নি। তবে ব্যাপারটিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে এগোচ্ছে বিপিএল কর্তৃপক্ষ ও বিসিবি। এ নিয়ে গতকাল ইসমাইল হায়দার মল্লিক বলেন, ‘জাতীয় দলের অধিনায়কের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ একদমই অনাকাঙ্খিত এবং অপ্রত্যাশিত। আমরা আবদুল আউয়াল চৌধুরীকে তলব করেছি। তার সঙ্গে বসবো। তার কথা শুনবো এবং বক্তব্য শুনে আমরা ব্যবস্থা নেবো। যদি প্রমাণিত হয় তিনি আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন, তবে তাকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেটা আর্থিক জরিমানা হোক কিংবা নিষিদ্ধ করাই হোক।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুশফিক আমার কথামতোই বরিশালে খেলেছিল। তার আগ্রহ ছিল না তবুও; কিন্তু জাতীয় দলের একজন খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে এমন আপত্তিকর মন্তব্য করার অধিকার আমরা কাউকেই দেইনি। আর বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের নিয়ম-নীতি অনুযায়ীও প্রকাশ্যে কেউ এমন মন্তব্য করতে পারে না। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সে আমাদের কাছে অভিযোগ করতে পারতো।’
এর আগে গত পরশু বরিশাল বুলসের স্বত্বাধিকারী ও বিসিবি পরিচালক আবদুল আউয়াল চৌধুরী ভুলু একাধিক বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে মুশফিকের বিরুদ্ধে গত বিপিএলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তোলেন। সে সময় তিনি তার নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। এবার তাকে দলে চান না তিনি। দলের ভেতর নাকি বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক গ্রুপিংও করেন। এমন অভিযোগও করেছেন বুলস মালিক। এরপরই নড়েচড়ে বসেন মুশফিক। গতকাল ব্যাপারটি বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল ও বিসিবিকে জানান তিনি। এখন দেখার বিষয় ব্যাপারটি নিয়ে কতটুকু কী করে দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থাটি।