ক্রীড়া ডেস্ক: আগের ম্যাচে আশা জাগিয়েও সেঞ্চুরির দেখা পাননি। তবে সেই ভুল আর মঙ্গলবার করেননি মুশফিকুর রহিম। দলের বিপদের সময় এক প্রান্ত আগলে রেখে অত্যান্ত ঠান্ডা মাথায় এ তারকা ব্যাটসম্যান ব্যাট চালান। এক পর্যায়ে ক্যারিয়ারের ৮ম সেঞ্চুরির দেখা পান। তার এমন বীরচিত ইনিংসে ভর করে টাইগারও পেয়ে যায় লড়াইয়ের পুঁজি। শেষ পর্যন্ত তার ওপর ভর করে বোলারদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে দ্বিতীয় ম্যাচে ১০৪ রানে জিতে প্রথমবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ নিজেদের করে নিয়ে ইতিহাস গড়ল তামিম ইকবালের দল।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার টস জিতে ব্যাটিংয়ের শুরুটা মোটেও ভাল ছিলো না বাংলাদেশের। তবে মুশফিকের (১২৫) দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ২৪৬ রানের পুঁজি পায় টিম টাইগার্স। পরে বৃষ্টির কারণে লঙ্কানদের লক্ষ্য দাড়ায় ৪০ ওভারে ২৪৫ রান। তবে সাকিব আল হাসান, মেহেদি হাসান মিরাজ , মোস্তাফিজুর রহমানদের দুর্দান্ত বোলিং নৈপুণ্যে শ্রীলঙ্কাকে ৪০ ওভারে শ্রীলঙ্কার ৯ উইকেট তুলে নিয়ে ১৪১ রানে থামিয়ে দিয়ে দারুণ জয় তুলে নেয় স্বাগতিকরা। এরফলে তিন ম্যাচের সিরিজ এক ম্যাচ হাতে রেখেই নিজেদের দখলে নেয় রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল নবম দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। এরআগের ৮ সিরিজের মধ্যে দুটি সিরিজ ড্র হয়, বাকি সবগুলোয় জয় লঙ্কানদের।
মঙ্গলবার ব্যাট করতে নেমেই বাংলাদেশ বিপদে পড়ে তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানকে হারিয়ে। তবে সেখান থেকে দলকে উদ্ধারের জন্য লড়াই চালিয়ে যান মুশফিক। পরিস্থিতি যখন দাবি করেছে, দারুণ সব শটে ঠিকই আদায় করেছেন বাউন্ডারি। সে ধারাবাহিকতায় এ তারকা ৭০ বলে করেন হাফসেঞ্চুরি, পরের পঞ্চাশ করেন ৪৪ বলেই। সেঞ্চুরির পর দ্রুত রান বাড়ান আরও। শেষ পর্যন্ত তিনি থামেন ১২৭ বলে ১০ চারে ১২৫ করে। এরমধ্যে মুশফিককে দারুণ সঙ্গ দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাদের জুটি থেকে আসে ৮৭ রান। এদিকে ইনিংসের ৩৪তম ওভারে মাহমুদউল্লাহ আউট হওয়ায় আবার বাংলাদেশ ইনিংস মুশফিকনির্ভর হয়। আটে নামা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে নিয়ে তিনি চালিয়ে যান লড়াই। ৪৮ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের রান লড়াই করার মতো অবস্থায় নিয়ে যান মুশফিক।
৪৪ রানে ৩ উইকেট নেন পেসার চামিরা। রিস্ট স্পিনার লাকশান সান্দাক্যান ৩ উইকেট নেন ৫৪ রানে।
বল হাতে নেয়ার আগে মঙ্গলবার বাংলাদেশ শিবিরে লাগে ধাক্কা। ব্যাট করার সময় সাইফউদ্দিনের হেলমেটে লেগেছিল শ্রীলঙ্কান পেসার চামিরার বল। মাথায়ও কিছুটা চোট পেয়েছেন তিনি। ঝুঁকি না নিয়ে কনকাশন (মস্তিস্কে আঘাতজনিত চোট) বদলি হিসেবে তাসকিন আহমেদকে নামায় বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচের এদিনও তিনি খুব একটা ভাল বল করতে পারেননি। তবে ঠিকই কারিশমা দেখান সাকিব আল হাসান, মেহেদি হাসান মিরাজ ও মোস্তাফিজুর রহমান। যে কারণে লঙ্কানদের ইনিংস শুরু থেকেই মন্থর গতিতে চলে। এরমধ্যে নিয়মিত বিরতিতে সফরকারীদের উইকেট নিতে থাকে বাংলাদেশি বোলাররা। মঙ্গলবার বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট এনে দেন অভিষিক্ত শরিফুল ইসলাম। নিজের তৃতীয় ওভারে শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক কুশল পেরেরাকে তুলে নেন এ বাঁহাতি পেসার। মিড অনে তার বলে ক্যাচ নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। এরপর সফরকারীদের আরও চেপে ধরে স্বাগতিকর বোলাররা। যে কারণে ১৩ ওভারে ৫০ পেরোই লঙ্কানরা। এর কিছুক্ষণ পরই মোস্তাফিজুর রহমানের হাত ধরে সাফল্য পায় বাংলাদেশ। ১৪তম ওভারের শেষ বলে দানুস্কা গুনাথিলকাকে সাকিব আল হাসানের ক্যাচে পরিণত করেন মোস্তাফিজ। ৪৬ বলে ২৪ রান করে ফিরেছেন গুনাথিলকা। এদিকে ম্যাচের ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে সাকিব আল হাসান পান উইকেটের দেখা। তাকে তুলে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে তামিমকে ক্যাচ দেন পাথুম নিশাঙ্কা। ২০ রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এ ক্ষত শুকানোর আগেই ইনিংসের ২২তম ওভারে তৃতীয় বলেই লঙ্কান শিবিরে আঘাত করেন মেহেদি হাসান মিরাজ। কুশল মেন্ডিসকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন এ স্পিনার। কিছুক্ষণ পরেই ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন সাকিব।
নিয়মিত বিরতিতে লঙ্কানদের উইকেট নিয়ে খোজ মেজাজে ছিল বাংলাদেশ। ঠিক সে সময় সাকিব আল হাসানকে ছক্কা মেরে ডানা মেলার আভাস দিয়েছিলেন দাসুন শানাকা। তবে তেমন কিছুর আগেই তাকে ফিরিয়ে দেন মিরাজ। এ স্পিনার এদিন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে ৩৪তম ওভারের চতুর্থ বলে বোল্ড আউট করেন। ৬ রান করে আউট হন তিনি। যে কারণে জয়ের সুবাস পেতে থাকে তামিম ইকবালের দল। যা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাড়িয়ে দেন মোস্তাফিজ। ৩৫ ও ৩৭তম ওভারে এ পেসার তুলে নেন আসেন বান্দারা ও সান্দাক্যানের উইকেট। শেষ দিকে টাইগারদের জয় কিছুটা বিলম্বিত করে বেরশিক বৃষ্টি। কিন্তু তারপরও টাইগারদের সিরিজ জয়ের আনন্দে পড়েনি ভাটা।
টাইগরদের হয়ে মিরাজ ও মোস্তাফিজ নেন ৩টি করে উইকেট। সাকিব নেন ২টি উইকেট। অসাধারণ ব্যাটিংয়ের সুবাদে ফের ম্যাচ সেরা হয়েছেন মুশফিকুর রহিম।