ক্রীড়া প্রতিবেদক: দিনের শুরুতেই নাথান লায়নের স্পিন-বিষে নীল বাংলাদেশ। টপ অর্ডারের চার ব্যাটসম্যানই তার ঘূর্ণিতে পড়েছেন এলবিডব্ল–র ফাঁদে। কিন্তু বাংলাদেশকে ব্যাটফুটে যেতে দেননি মুশফিকুর রহিম ও সাব্বির রহমান। ষষ্ঠ উইকেটে তাদের শতরানের জুটিতে স্বস্তিতে দিন শেষ করেছে স্বাগতিকরা।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে গতকাল আশার আলো দেখান সৌম্য সরকার-মুমিনুল হক। তাদের দ্রুত বিদায়ের পর বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি সাকিব আল হাসানও। কিন্তু ঠিকই দলকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন অধিনায়ক মুশফিক ও সাব্বির। তাদের কল্যাণে প্রথম দিনের খেলা শেষে ৬ উইকেটে ২৫৩ রান করেছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ৬২ ও নাসির হোসেন ১৯ রানে ব্যাট করছেন। আজ টেস্টের দ্বিতীয় দিনে একটি বা দুটি সেশন খেলতে পারলে অস্ট্রেলিয়ার সামনে বড় স্কোর দাঁড় করাতে পারে টাইগাররা।
গতকাল সিরিজে দ্বিতীয় টেস্টে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি বাংলাদেশের। লায়নের বলেই দিনের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়ে ফিরে যান তামিম ইকবাল। দলের রান তখন ১৩। তিন নম্বরে ব্যাট করতে এসেছিলেন ইমরুল কায়েস। কিছুক্ষণ পর তাকেও এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন লায়ন। কিন্তু আম্পায়ার আউট দেননি তাকে। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় আম্পায়ারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। তাতে সফল তিনি। ২ উইকেটে সে সময় বাংলাদেশের স্কোর ২১। এরপর প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন সৌম্য ও মুমিনুল। তৃতীয় উইকেটে ৪৯ রানের জুটি বেঁধে ম্যাচে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু দলীয় ৭০ রানে লায়নের তৃতীয় শিকার হয়ে ফিরে যান ৩৩ রান করা সৌম্য।
লাঞ্চের পর সেই লায়নের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন মুমিনুল। প্রথম টেস্টে একাদশের বাইরে থাকা টাইগার এ বাঁহাতি গতকাল করেন ৬৭ বলে ৩১ রান। এরপর সাকিব-মুশফিক দলীয় স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৩২ রান। তবে অ্যাশটন অ্যাগারের বলে উইকেটরক্ষক ম্যাথু ওয়েডকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। ৫২ বলে ২৪ রান করেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ১১৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়েছিল বাংলাদেশ। সে বিপদ থেকে দলকে বের করেছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও সাব্বির। মুশফিক কিছুটা দেখেশুনে খেললেও সাব্বির খেলেন তার মতো করেই। তাদের ষষ্ঠ উইকেটে আসে ১০৫ রান। ঠিক সে সময় বাংলাদেশের প্রতিরোধ ভাঙে অস্ট্রেলিয়া। বোলিংয়ে ফিরেই সাব্বির রহমানকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফিরিয়ে সিরিজে দ্বিতীয়বারের মতো ৫ উইকেট তুলে নেন লায়ন। বলটি ছিল মারার মতোই। সাব্বির পুল করেন। হয়নি টাইমিং। তাল সামলাতে পারেননি। মুহূর্তের জন্য ক্রিজের বাইরে পা। ওই সময়টুকুতেই কাজ সেরে নিয়েছেন ম্যাথু ওয়েড। এরপর দিনের বাকি অংশটা নাসির হোসেনকে নিয়ে নিরাপদে কাটিয়ে দেন মুশফিক।
গতকাল বাংলাদেশের টপ অর্ডারকে ধসিয়ে দিয়ে একটি অনন্য রেকর্ডেরও মালিকও হয়ে গেছেন অস্ট্রেলিয়ান অফস্পিনার লায়ন। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪০ বছরের ইতিহাসে এমন কিছু আগে ঘটেনি। কোনো দলের প্রথম চার ব্যাটসম্যানকেই কোনো বোলার এলবিডব্ল– করতে পারেননি। সেটাই চট্টগ্রামে করে দেখালেন অজি এ স্পিনার। তারপরও প্রথম দিনটি স্বস্তিতেই পার করেছে টাইগাররা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ২৫৩/৬ (তামিম ৯, সৌম্য ৩৩, ইমরুল ৪,
মুমিনুল ৩১, সাকিব ২৪, মুশফিক ৬২*, সাব্বির ৬৬, নাসির ১৯*; কামিন্স ০/৩৩, লায়ন ৫/৭৭, ও’কিফ ০/৭০, অ্যাগার ১/৪৬, ম্যাক্সওয়েল ০/৬, কাটব্রাইট ০/১৬)