নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রিন্স মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে বিলাসবহুল গাড়িতে দুই কোটি ১৭ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকি ও সুইস ব্যাংকে ৯৬ হাজার কোটি টাকার অস্বচ্ছ হিসাব দাখিলের অভিযোগে মামলা হয়েছে। সোমবার গুলশান থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এ মামলা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক-গোয়েন্দা অধিদফতর।
শুল্ক গোয়েন্দার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) জাকির হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক মঈনুল খান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মঈনুল খান বলেন, শুল্ক গোয়েন্দার অনুসন্ধানে মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা রেঞ্জ রোভার গাড়ি ভোলা বিআরটিএর কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে ভুয়া কাগজ দিয়ে নিবন্ধন এবং অবৈধ অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তার ভিত্তিতেই এ মামলা হয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মুসা ১৭ লাখ টাকা শুল্ক পরিশোধ দেখিয়ে ভুয়া বিল অব এন্ট্রি প্রদর্শন করে গাড়িটি বেনামে নিবন্ধন করেন। কিন্তু গাড়িটিতে দুই কোটি ১৭ লাখ টাকার শুল্ক কর জড়িত বলে তদন্তে উঠে আসে। এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দারা ঢাকা কাস্টম হাউসে শুল্ক ফাঁকির মামলা করেছিলেন। এদিকে গাড়ির নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির সংযোগ থাকায় তা পৃথকভাবে তদন্তের জন্য এনবিআরের মাধ্যমে দুদককে অনুরোধ করা হয়েছে।
এর আগে ফারুক উজ-জামান চৌধুরীর নামে নিবন্ধিত ওই রেঞ্জ রোভার গাড়ি গত ২১ মার্চ মুসার ছেলের শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। তারপর মুসাকে কাকরাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কার্যালয়ে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ভোলা বিআরটিএর কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে ভুয়া কাগজ দিয়ে ওই গাড়ি নিবন্ধন এবং বেনামে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার কথা ওই সময়ই জানিয়েছিল শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর।
শুল্ক গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে মুসা বিন শমসের লিখিতভাবে জানান, সুইস ব্যাংকে তার ৯৬ হাজার কোটি টাকা জমা আছে। কিন্তু এ টাকার কোনো ব্যাংক হিসাব বা বৈধ উৎস দেখাননি তিনি। কয়েকবার নোটিশ দিলেও তিনি তা জমা দেননি বলেও জানান শুল্ক গোয়েন্দারা।
অন্যদিকে ২১ জুন নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির সংযোগ থাকায় তা পৃথকভাবে তদন্তের জন্য গাড়িতে শুল্ক ফাঁকিসংক্রান্ত দুর্নীতি অনুসন্ধান প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) হস্তান্তর করে শুল্ক গোয়েন্দা। যেখানে কারনেট সুবিধার মাধ্যমে আনা ওই গাড়ির জন্য মামলার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া মুসার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা দুদকে তদন্তাধীন।
উল্লেখ্য, জনশক্তি রফতানি দিয়ে ব্যবসা শুরু করা মুসা বিন শমসের অস্ত্র ব্যবসায়ী হিসেবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে পরিচিতি পান। বিলাসী জীবনযাপনের কারণে বিদেশি গণমাধ্যমে তাকে ‘প্রিন্স অব বাংলাদেশ’ বলা হয়। ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যে নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী টনি ব্লেয়ারের নির্বাচনী প্রচারের জন্য পাঁচ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি।
Add Comment