Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 9:34 pm

মূলধনি যন্ত্রপাতির অবৈধ ব্যবসায় নেমেছে ৩৬ টেক্সটাইল মিল

রহমত রহমান : ক্যাপিটাল (মূলধনি) মেশিনারি সুবিধায় অটোমেটিক পাওয়ার লুম আমদানি করে তা খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে নরসিংদীর ৩৬টি টেক্সটাইল মিল। গত পাঁচ বছরে এভাবে ৩০ হাজার ৩৫৩টি মেশিন আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৫ হাজার ২১টি মেশিন কারখানায় স্থাপন করা হয়েছে। বাকি ২৫ হাজার ৩৩২টি মেশিন খোলাবাজারে অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের বিক্রয় কার্যক্রম সম্পূর্ণ অবৈধ।

এর মাধ্যমে প্রায় ৩৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ৩৬টি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া এসব মেশিনে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার শুল্ককর ফাঁকি হতে পারে, যা পরিশোধ না করেই প্রতিষ্ঠানগুলো মেশিন বিক্রি করে দিয়েছে। ঢাকা পূর্ব কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট টেক্সটাইল মিলগুলো পরিদর্শন করে এসব জালিয়াতি উদ্ঘাটন করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শুল্ককর ফাঁকি ও মেশিন আমদানিতে নজরদারি বৃদ্ধি করতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে ভ্যাট পূর্ব কমিশনারেট। গতকাল এ চিঠি দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে ঢাকা পূর্ব ভ্যাট কমিশনারেটের অধিক্ষেত্রাধীন বিভিন্ন টেক্সটাইল মিলস কর্তৃক অন-চেসিস ডেলিভারির ভিত্তিতে পাওয়ার লুম মেশিন আমদানির ক্ষেত্রে নজরদারি বৃদ্ধি করার অনুরোধ জানানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা ভ্যাট পূর্ব কমিশনারেটের অধিক্ষেত্রাধীন নরসিংদী জেলা। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নরসিংদী ভ্যাট বিভাগের ৩৬টি টেক্সটাইল মিলস আকস্মিক অভিযান পরিচালনা করা হয়।

অভিযানে দেখা যায়, ৩৬টি টেক্সটাইল মিলস দীর্ঘদিন ধরে মূলধনি যন্ত্রপাতি-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বর্ণিত শুল্ককর সুবিধা গ্রহণ করে গত ৫ বছরে বিপুল পরিমাণ অটোমেটিক পাওয়ার লুম মেশিন আমদানি করেছে, যার অধিকাংশ মেশিন কারখানায় স্থাপন ও উৎপাদন কাজে ব্যবহার করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানগুলো শুল্ককর সুবিধার অপব্যবহার করে প্রজ্ঞাপনের শর্ত ভঙ্গ করে স্থানীয় বাজারে ভ্যাট পরিশোধ না করেই বিক্রয় করে দিয়েছে এগুলো। এসব টেক্সটাইল মিলের আমদানি চালান খালাসের ক্ষেত্রে নজরদারি বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কাস্টমস কমিশনারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এনবিআর সূত্রমতে, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মেসার্স আইদা টেক্সটাইল ৩৩২টি মেশিন আমদানি করেছে, যার মধ্যে উৎপাদন কাজে ব্যবহƒত হচ্ছে ৪৮টি। বাকি ২৮৪টি বিক্রি করে দিয়েছে। একইভাবে খান টেক্সটাইলের ৪০টি মেশিন আমদানি করেছে, যা উৎপাদন কাজে ব্যবহƒত হচ্ছে। মেসার্স আল আমিন টেক্সটাইল ২৮৮টি আমদানি করেছে, যাতে ব্যবহƒত হচ্ছে ৮২টি। বাকি ২০৬টি বিক্রি করে দিয়েছে। মেসার্স জোহরা টেক্সটাইল ১২৮টি আমদানি করে ১২৮টি বিক্রি করে দিয়েছে। আমিন মীর টেক্সটাইল ৬৩০টি আমদানি করে ৫৩০টি বিক্রি করে দিয়েছে। আদর টেক্সটাইল ৬০টি আমদানি করে ২০টি বিক্রি করে দিয়েছে। অভি টাই ডাই অ্যান্ড সুইং হাউস এক হাজার ৮৬টি আমদানি করে সবগুলোই বিক্রি করে দিয়েছে। করিম টেক্সটাইল ২৫০টি আমদানি করে ১৯৪টি বিক্রি করে দিয়েছে। আর কে টেক্সটাইল দুই হাজার ১৫০টি আমদানি করে সবগুলো বিক্রি করে দিয়েছে। ফাহাদ টেক্সটাইল ২০৪টি আমদানি করে ১৫৬টি বিক্রি করে দিয়েছে। আগমনী টেক্সটাইল ২২০টি আমদানি করে ১৮০টি বিক্রি করে দিয়েছে। মেসার্স সুমন টেক্সটাইল ৮০টি আমদানি করে ৮০টি উৎপাদন কাজে ব্যবহƒত হচ্ছে। মেসার্স এসবি টেক্সটাইল ৩১০টি আমদানি করে ২০৬টি বিক্রি করে দিয়েছে। মেসার্স বুনন টেক্সটাইল ৪২০টি আমদানি করে ৩৪০টি বিক্রি করে দিয়েছে। মেসার্স মনি টেক্সটাইল ৩৮৪টি আমদানি করে ৩৮০টি বিক্রি করে দিয়েছে।

মেসার্স নিঝুম টেক্সটাইল এক হাজার ২৮৮টি আমদানি করে এক হাজার ১৫২টি বিক্রি করে দিয়েছে। উমাইজা টেক্সটাইল ৩৭২টি আমদানি করে ২৩০টি বিক্রি করে দিয়েছে। মডার্ন টেক্সটাইল ৩২২টি আমদানি করে ২৫২টি বিক্রি করে দিয়েছে। মেসার্স শিল্পী টেক্সটাইল ১২০টি আমদানি করে ৮৪টি বিক্রি করে দিয়েছে। মেসার্স সুলতানা টেক্সটাইল অ্যান্ড ট্রেডার্স ৬৭৪টি আমদানি করে ৫৪৬টি বিক্রি করে দিয়েছে। মুন টেক্স দুই হাজার ৩৬৫টি আমদানি করে সবগুলোই বিক্রি করে দিয়েছে। এম আর টেক্সটাইল ৭২টি আমদানি করে ২৭টি বিক্রি করে দিয়েছে। এইচ আর টেক্সটাইল ১৮০টি আমদানি করে ১০০টি বিক্রি করে দিয়েছে। মেসার্স হারুন টেক্সটাইল ২০০টি আমদানি করে ৯০টি বিক্রি করে দিয়েছে। মেসার্স মাদার টেক্সটাইল ৩৭৬টি আমদানি করে ২৩৬টি বিক্রি করে দিয়েছে। মেসার্স রংধনু টেক্সটাইল ৩৭০টি আমদানি করে ৩৪৬টি বিক্রি করে দিয়েছে। মেসার্স মদিনা টেক্সটাইল তিন হাজার ১৪৪টি আমদানি করে তিন হাজার ৬৬টি বিক্রি করে দিয়েছে। মেসার্স জারিফ টেক্সটাইল এক হাজার ১৭২টি আমদানি করে এক হাজার ১৪৪টি বিক্রি করে দিয়েছে।

বারজা টেক্সটাইল ১৯৬টি আমদানি করে ১০০টি বিক্রি করে দিয়েছে। মেসার্স হাজী সাইজিং মিল এক হাজার ১১৪টি আমদানি করে ৯১৪টি বিক্রি করে দিয়েছে। হক টেক্সটাইল ৩৮০টি আমদানি করে ২৭৬টি বিক্রি করে দিয়েছে। মমিন টেক্সটাইল তিন হাজার ৯৫০টি আমদানি করে তিন হাজার ৭০৭টি বিক্রি করে দিয়েছে। ইয়ামিন স্পিনিং এক হাজার ৫২০টি আমদানি করে এক হাজার ২৩৬টি বিক্রি করে দিয়েছে। ইয়ামিন সাইজিং ৭০৪টি আমদানি করে ১৬৪টি বিক্রি করে দিয়েছে। স্নেহা মনি টেক্সটাইল দুই হাজার ৪৪০টি আমদানি করে ৮৪০টি বিক্রি করে দিয়েছে। সরকার টেক্সটাইল দুই হাজার ৮১২টি মেশিন আমদানি করে দুই হাজার ৫৯৯টি বিক্রি করে দিয়েছে।

ঢাকা পূর্ব ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার তাসমিনা হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে রাজস্ব আহরণে সততার সঙ্গে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। করোনার মধ্যে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে নতুন নতুন খাতের দিকে নজর দিতে এনবিআর নির্দেশ দিয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা নতুন খাত খুঁজে বের করছি। আগে থেকেই যেসব প্রতিষ্ঠান ভ্যাটের আওতায় আছে, সেগুলোর দিকে মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান যাতে আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে যেতে না পারে তাতে নজর দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি যেসব প্রতিষ্ঠান নানা কায়দায় ভ্যাট দিত না তাদেরও ভ্যাটের আওতায় আনা হচ্ছে।’

টেক্সাটাইল মিলসের মেশিন খোলাবাজারে বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শর্ত ভঙ্গ করায় আমরা ট্রেড ভ্যাট আদায় করব। মূলধনি যন্ত্রপাতিতে আমদানিতে এসব প্রতিষ্ঠান যে শুল্ককর ফাঁকি দিয়েছে তা আদায় করতে এবং এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি নজরদারি বৃদ্ধি করতে আমরা কাস্টমস হাউসকে চিঠি দিয়েছি।’