মূল্যসূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে ৩৩%

শেয়ার বিজ ডেস্ক:দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে সব মূল্যসূচক কমেছে। তবে বেড়েছে লেনদেনের গতি।

প্রায় দেড় বছর পর পুঁজিবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার পর গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসে বড় দরপতন হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে গেছে। এতে এক সপ্তাহে ডিএসই বাজার মূলধন প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা নেই হয়ে গেছে। এসব কারণে কমেছে সব মূল্যসূচক।

বিভিন্ন ইস্যুতে পুঁজিবাজারে লাগাতার পতন হলে গত চার বছরে কয়েক দফায় শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ২০২০ সালের মার্চে প্রথমবার ফ্লোর প্রাইস আরোপ করলেও তুলে নেয়া হয় ২০২১ সালের জুলাইয়ে। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ২০২২ সালের জুলাইয়ে আবার ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি। এ পর্যায়ে শেয়ার লেনদেন ব্যাপক কমে গেলে সমালোচনায় পড়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

সম্প্রতি ফ্লোর প্রাইস নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে গত ১৮ জানুয়ারি প্রথম ধাপে ৩৫টি প্রতিষ্ঠান ছাড়া সবগুলোর ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া হয়। এতে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব দেখা দিলে ২১ জানুয়ারি আরও ২৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া হয়।

তবে গত সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবস পুঁজিবাজারে টানা দরপতন হয়। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে বড় পতন দেখতে হয় বিনিয়োগকারীদের। একই সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে প্রায় ৩ শতাংশ। বাজার মূলধন কমেছে ৪ শতাংশের ওপরে। তবে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ায় লেনদেনে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে ৩৩ শতাংশের বেশি।

গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৭৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩০৮টির। ১৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

বৃদ্ধির তুলনায় দাম কমার তালিকায় চার গুণ বেশি প্রতিষ্ঠান থাকায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকায়, যা গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৩২ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।

এদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৮০ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৩৫ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৬ শতাংশ। প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি পতন হয়েছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকের। গত সপ্তাহজুড়ে এ সূচকটি কমেছে ১৫ দশমিক ১০ পয়েন্ট বা দশমিক ৭১ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১১ দশমিক ৮০ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৬ শতাংশ। ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ৩৬ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১২ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৯০ শতাংশ।

সব মূল্যসূচক কমলেও লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৯৭০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৭২৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ২৪২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বা ৩৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ৮৫২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ৩ হাজার ৬৩৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে মোট লেনদেন বেড়েছে ১ হাজার ২১৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা বা ৩৩ দশমিক ৪০ শতাংশ।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বিডি থাই অ্যালুমিনিয়ামের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৩৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৩১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ১১৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফরচুন সুজ।

লেনদেনে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑফু-ওয়াং ফুড, দেশবন্ধু পলিমার, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ব্র্যাক ব্যাংক এবং সি পার্ল বিচ রিসোর্ট।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০