মূল্যস্ফীতিতে দিশাহারা নেপালের নিন্মবিত্তরা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: মূল্যস্ফীতির কারণে নেপালের পরিবারগুলোর জীবন কঠিন হয়ে পড়েছে। দিশাহারা হয়ে পড়েছেন নিন্মবিত্তরা। খবর: কাঠমান্ডু পোস্ট।

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর বাসিন্দা ৩১ বছর বয়সী উপেন্দ্র শাহীর পরিবারের সদস্যসংখ্যা চার। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় এবং এই রাইড শেয়ার চালকের আয় একই থাকায় তার পক্ষে পরিবারের ব্যয়ভার বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, খাদ্যের দাম আকাশচুম্বী। ডিম ও মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় খাবার তালিকা থেকে এগুলো বাদ দিয়েছি।

তার মতো চালকদের পেট্রোলের জন্য ব্যাপক খরচ করতে হয়। গত বছর নেপালে পেট্রোলের দাম ১১৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৭০ রুপি। তাই সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় উপেন্দ্র সঞ্চয় করতে পারছেন না, অথচ এক বছর আগেও তিনি মাসে অন্তত পাঁচ হাজার রুপি ব্যাংকে রাখতেন। এ অবস্থা তার মতো অন্যদেরও।

শিক্ষক টম লিম্বুর অবস্থাও একই। যাতায়াতের পেছনে তার আয়ের বড় অংশ ব্যয় হয়। কভিড মহামারির আগে যাতায়াতের জন্য তার দুই হাজার রুপি খরচ হতো, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে পাঁচ হাজার রুপি। গত বছরও তার পুরো পরিবারের জন্য মাসে খরচ হতো ২০ হাজার রুপি, বর্তমানে যা ৩৫ হাজার রুপি ছাড়িয়ে গেছে। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে চলতি মাসে। তাই সন্তানের বিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত তিনি। কেননা ভর্তির খরচের পাশাপাশি বই, স্টেশনারি ও ইউনিফর্মেরও দাম বেড়েছে।

ক্ষুদ্র অর্থনীতি ও আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে নেপাল রাষ্ট্র ব্যাংকের মাসিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ, যা গত ৬৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। সবশেষ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছাড়িয়ে যায় ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ, পরে যা দীর্ঘদিন ৭ দশমিক ৯ শতাংশে অবস্থান করে।

উল্লেখজনকভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও মানুষের বেতন বাড়েনি। ২০২০-২১ অর্থবছরে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি গড়ে ছিল ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, একই সময় বেতন ও মজুরি বাড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে দেয় মজুরি বৃদ্ধির হার। মজুরি না বাড়লে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের পক্ষে জীবনধারণ করা বেশ কষ্টকর বলে জানান অর্থনীতিবিদ কেশব আচার্য। তার মতে, মূল্যস্ফীতির শিকার নি¤œ আয়ের মানুষসহ দৈনিক মজুরি উপার্জনকারীরা। এতে তারা দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ শিগগির না থামলে মূল্যস্ফীতি বাড়তেই থাকবে। তিনি জানান, ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে সরকার আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়াবে না। এতে চাপে থাকবে বেসরকারি খাতও, কেননা নিয়োগদাতারা কর্মীদের বেতন বাড়াবেন না, ফলে রাজস্ব

আয় কমে যাবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি এমন সময় আঘাত করছে যখন অনেক কর্মী মহামারির কারণে চাকরি হারিয়েছেন।

নেপাল ডেভেলপমেন্ট আপডেট অনুযায়ী, গত এপ্রিলে বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, পুনরায় চাকরিপ্রাপ্তরা কম বেতনে কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে যে কর্মীরা কাজে যোগ দিয়েছিলেন, তাদের ৫২ শতাংশ চাকরি হারান কিংবা তাদের বেতন কমিয়ে দেয়া হয়, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। ৪৫ শতাংশ কর্মী খাত পরিবর্তন করেন এবং তুলনামূলক কম বেতন ও কম দক্ষতাপূর্ণ চাকরিতে যোগ দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রমবাজারের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে নেপালে দারিদ্র্য বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিন্মবিত্তরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

তবে রেমিট্যান্স প্রবাহ ঠিক থাকায় অনেক পরিবার পরিস্থিতি সামলে উঠতে পারছে। যদিও রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি আরও কয়েক মাস অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুদ্ধের কারণে এরই মধ্যে আকাশচুম্বী হয়েছে জ্বালানির দাম, যা ৫০ শতাংশের বেশি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমদানিনির্ভর দেশ হওয়ায় তাদের সমস্যা আরও প্রকট হতে পারে বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইকোনমিক রিসার্চ ডিপার্টমেন্টের প্রধান প্রকাশ কুমার শ্রেষ্ঠ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০