শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রতি বছর ১১ সেপ্টেম্বর নববর্ষ উদযাপন করে ইথিওপিয়া। চলতি বছরের এনকুটাটাশ নামের উদযাপনে ভাটা পড়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে। পাশাপাশি দেশটির উত্তরে ধারাবাহিক সংঘর্ষ ও খরার কারণে নববর্ষ উদযাপন করতে পারেননি দেশটির নাগরিকরা। একই দিন ইরিত্রিয়ায়ও নববর্ষ উদযাপন করা হয়। খবর: আফ্রিকা নিউজ।
রাজধানী আদ্দিস আবাবার প্রধান পশু বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা বছরের প্রথম দিনটিকে শোকের দিবস হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বাজারের ব্যবসায়ী এনডাশিউ ডেনেকিউ এএফপিকে বলেন, দেখতেই পাচ্ছেন সবকিছুর দাম বেড়েছে। দেশে শান্তি থাকলে এমন ঘটনা ঘটত না। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ চলছে, যা একটি জাতির জন্য মোটেও স্বস্তির নয়। মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ঘরেই থাকছেন। তারা বাজারে আসছেন না এবং অনেকে বিক্রির জন্য তাদের পশু বাজারে আনেননি।
গত মাস থেকে প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদের বাহিনীর সঙ্গে তিগ্রাই পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের (টিটিএলএফ) সংঘর্ষ চলছে। এর আগে পাঁচ মাসের যুদ্ধবিরতি চলছিল, যা দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশা জাগিয়েছিল।
গত সপ্তাহে বিশ্বব্যাংক এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, ইথিওপিয়ার সংঘাত ও পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগের। চলতি বছরের ঐতিহাসিক খরা ও ধারাবাহিক সংঘাত লাখ লাখ ইথিওপিয়ানকে দুর্ভোগে ফেলে দিয়েছে। এতে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অর্জিত দেশটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন হুমকিতে পড়েছে।
ইউএন অফিস ফর দ্য কো-অরডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ) চলতি মাসের শুরুতে ইথিওপিয়ার মানবিক পরিস্থিতি ‘মারাত্মক’ বলে উল্লেখ করে। দেশব্যাপী ২ কোটি মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। দ্বন্দ্ব, সংঘর্ষের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি খরা ও মৌসুমি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এসব মানুষ।
আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর দেশ ইথিওপিয়া। সাড়ে ১১ কোটি জনসংখ্যার দেশটি গত ১৫ বছরে বিশ্বের দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির একটিতে পরিণত হয়েছে। তবে অন্যান্য দেশগুলোর মতো, ইথিওপিয়াও কভিড-১৯ মহামারি, ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানসহ অভ্যন্তরীণ সংঘাতে কঠোরভাবে দুর্দশায় পড়েছে বলে জানায় বিশ্বব্যাংক।
দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি বাড়ে ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ে ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হিমশিম খান সাধারণ মানুষ।
রাজধানীর প্রধান উš§ুক্ত বাজারের সরকারি কর্মকর্তা কোম্বে গেব্রেহানা বলেন, আগের মতো হোলিডে বাজারে আর লোকসমাগম হয় না। অতীতে এসব বাজারে ক্রেতার ভিড় লেগে থাকত। দেশের সব প্রান্তে মূল্যস্ফীতির ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। মানুষের হাতে অর্থ থাকলে… ছুটির এ সময় এত কম ভিড় থাকত না।
সম্প্রতি রাস্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইথিওপিয়া নিউজ এজেন্সীকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আবিজের জ্যেষ্ঠ নীতি নির্ধারক মামো মিহরেতু জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া স্বীকার করে নেন। তবে সরকার যে এই সমস্যা সমাধানে কাজ করছে এবং মূল্যস্ফীতি শিগগির নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে তিনি তা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রচেষ্টায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। অন্তত স্থিতিশীল হবে বলে আশাবাদী দেশটির সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের প্রধান মামো। সরকার অর্থনৈতিক সংস্কার আনছেন, যা বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে এবং চলতি বছর ব্যবসা ও অর্থনৈতিক পূর্বাভাস ছয় শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
হর্ন অব আফ্রিকায় সফরকালে ইথিওপিয়ার নববর্ষ উপলক্ষে দেয়া এক ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি মাইক হ্যামার বলেন, ইথিওপিয়ার উত্তরে চলা সহিংসতা নতুন মাত্রা পাবে এবং শান্তি আনয়নে কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা চলছে। আশা করি, গোষ্ঠীগুলো লড়াই থামাতে আলোচনায় বসবে এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করবে।
প্রসঙ্গত, ইথিওপিয়ায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা সংঘাতের কারণে তিগ্রাই অঞ্চলের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর খাদ্য সহায়তার প্রয়োজন ‘তীব্র’ হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিএফপি)। পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ না থাকায় দাতা সংস্থাগুলোকেও ওই অঞ্চলের বিপদগ্রস্ত মানুষের কাছে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানায় সংস্থা।