নিজস্ব প্রতিবেদক: মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল সুদ হার (পলিসি রেট) ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা আজ বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে। গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত মনিটারি পলিসি কমিটির ৬০তম সভায় রেপো সুদ হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক শেয়ার বিজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মেজবাউল হক বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ ব্যাংকের এখন প্রধান টার্গেট। এই টার্গেট নিয়ে গত মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী মূল্যস্ফীতি কমেনি। এক্ষেত্রে কিছু পলিসি কাজ করেছে, কিছু করেনি। তাই আরও অ্যাগ্রসেভলি টার্গেট করার চিন্তা করা হচ্ছে। ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। যার জন্য পলিসি রেট ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এর আগে এত বড় পদক্ষেপে কখনও নেয়া হয়নি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যা করার দরকার বাংলাদশে ব্যাংক তাই করবে। এ পদক্ষেপেও যদি কাজ না হয়। তবে পরবর্তীকালে আরও পদক্ষেপ নেয়া হবে।
রেপো সুদহার হিসেবে পরিচিত নীতি সুদহার বাড়ানোর অর্থ হলোÑকেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ ধার করতে ব্যাংকগুলোকে এখন বাড়তি সুদ দিতে হবে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোয় রাখা আমানত ও ব্যাংকঋণের সুদহারও বাড়বে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক আরও সংকোচনমূলক মুদ্রা সরবরাহের পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিল।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই–ডিসেম্বর) মুদ্রানীতিতে রেপো হার ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে নির্ধারণ করে। মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ওই সময় এ পদক্ষেপ নেয়া হয়। তবে তা বাড়িয়ে কাক্সিক্ষত ফল পায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই গতকাল তা আরও ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়। রিভার্স রেপো ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ, যা আগে ছিল ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। স্পেশাল রেপো সুদহার হার ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়, যা আগে ছিল সাড়ে ৮ শতাংশ। রিভার্স রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো থেকে টাকা তুলে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। স্পেশাল রেপোর মাধ্যমে তারল্যসংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে সুবিধা দেয়া হয়।মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য এতদিন মূলত ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করে আসছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সুদের হার বাড়লে মানুষ সাধারণত ব্যাংকে আমানত রাখতে উৎসাহিত হন।
দেশে গত মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে। এ মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশে নেমেছে, যা আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। তবে সেপ্টেম্বরে গ্রাম–শহর নির্বিশেষে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখনও ১২ শতাংশের ওপরেই ছিল। গত আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে ওঠে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গত মঙ্গলবার মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে সেপ্টেম্বরের মূল্যস্ফীতির এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, সেপ্টেম্বরে গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে, যা আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আর শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
এদিকে দেশের অর্থনীতির চলমান সংকট সমাধানে অর্থনীতিবিদ ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে শুরু করেছে সরকার। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার বিকালে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে যান সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের (বিআইজিএম) পরিচালক ড. মোহাম্মদ তারেক। এই দুই অর্থনীতিবিদও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে টাইট মনিটরি পলিস প্রণয়ন ও সরকারকে টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেয়া বন্ধ করার পরামর্শ দেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংককে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, পলিসি ও ওভারঅল ম্যাক্রো ইকনোমির চ্যালেঞ্জগুলো তাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এক্ষেত্রে দুইটি পরামর্শ তারা দিয়েছেনÑ এক. সরকারের টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেয়া বন্ধ করতে হবে। অন্যটি টাইট মনিটরি পলসিরি নিতে হবে। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আরও অ্যাগ্রেসিভলি আগানোর কথা বলেন তারা।