শেয়ার বিজ ডেস্ক: মূল্যস্ফীতি, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন, কভিড-১৯ মহামারি ও নাজুক আর্থিক বাজার বিদ্যমান থাকা সত্তে¡ও যুক্তরাষ্ট্রের চাকরির বাজার বেশ সন্তোষজনক অবস্থানে রয়েছে। এত নেতিবাচক খবরের ভিড়ে এপ্রিলে দেশটিতে কর্মসংস্থান বেড়েছে। গত বছর মে থেকে চলতি বছর এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় প্রতিমাসে গড়ে পাঁচ লাখ নতুন কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। খবর: এপি।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এ ধারা অব্যাহত থাকবে। জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টসেটের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে চার লাখের বেশি চাকরির পদ সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনীতিবিদদের ধারণা, বেকারত্বের হার তিন দশমিক ছয় শতাংশের বেশি বাড়বে না, যা অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে সর্বনি¤œ। মহামারি শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত বেকারত্বের হার এমনই ছিল। চাকরির বাজারের এই স্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন অর্থনীতিবিদরা। কেননা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, ক্রমবর্ধমান ঋণের খরচ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেডের সুদহার বৃদ্ধির কারণে চাকরির বাজার সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন তারা।
‘বসন্ত প্রান্তিকের শুরুতে চাকরির বাজার সঠিক অবস্থানে রয়েছে,’ বলেন পিএনসি ফাইন্যান্সিয়ালের জ্যেষ্ঠ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা স্টুয়ার্ট হফম্যান। ‘কর্মীর ভীষণ চাহিদা রয়েছে… প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করছে। একই সঙ্গে মজুরির হারও বাড়ছে,’ বলেন তিনি।
চলতি সপ্তাহে শ্রম বিভাগ চাকরির বাজার ক্রমবর্ধমান হওয়ার সপক্ষে আরও তথ্য দেয়। এক প্রতিবেদনে বিভাগ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র ১৩ লাখ ৮০ হাজার নাগরিক প্রচলিত বেকারত্বের সুবিধা নিচ্ছেন, যা ১৯৭০ সালের পর সর্বনি¤œ। বিভাগ আরও জানায়, নিয়োগদাতারা গত মার্চে রেকর্ড এক কোটি ১৫ লাখ পদ সৃষ্টি করেছেন এবং কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনা কভিডপূর্ব সময়ের পর্যায়ে রয়েছে। উপরন্তু অর্থনীতির অবস্থা এমন সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে যে, প্রত্যেক বেকারের জন্য বর্তমানে দুটি চাকরির সুযোগ রয়েছে। এটিও একটি রেকর্ড।
এছাড়া কর্মীরা চাকরিতে প্রত্যাশিত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, মার্চে রেকর্ড ৪৫ লাখ মানুষ স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। এ পরিসংখ্যান নিশ্চিত করে, কর্মীরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এ সময় অন্য প্রতিষ্ঠানে ভালো চাকরি পেয়েছেন। এছাড়া গত বছরজুড়ে শ্রমবাজারে ৩৮ লাখ মানুষ আবার যুক্ত হয়েছেন। এর অর্থ, তাদের হয় কোনো চাকরি রয়েছে, অথবা আরও একটি চাকরির সন্ধান করছেন তারা। তাদের কেউ কেউ মহামারির সংকটজনক সময়ে বেকার ছিলেন, অথবা ভিন্ন আয়ের উৎস খুঁজে বের করেন।
শ্রমবাজারের শক্ত অবস্থান সত্তে¡ও এই ধারা কতদিন থাকবে তা স্পষ্ট নয়। গত বুধবার ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় ফেড। এ নিয়ে গত দুই মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো হয় সুদহার। এবারের শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগামী জুন ও জুলাইয়ে সুদহার আরও বাড়তে পারে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ভোক্তারা। অর্থনীতিবিদরা তাই সতর্ক করে বলেন, ঋণের খরচ বৃদ্ধি মহামারিজনিত মন্দা কাটিয়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাধা দিতে পারে। মহামারির শুরুতে ২০২০ সালের মার্চ ও এপ্রিলে দুই কোটি ২০ লাখ মানুষ চাকরি হারান। এরপর ফেড সুদহার কমালে রিলিফ চেক বিতরণ ও টিকা দেয়া শুরু হলে স্বস্তি ফিরে আসে নাগরিকদের জীবনে। তবে পণ্যের ঘাটতি, সরবরাহ ব্যবস্থায় ধস ও কর্মিসংকটের কারণে দেশটিতে ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়।
এরই মধ্যে কর্মীর অভাবে অনেক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ধীরগতির হয়ে পড়ে। ফলে কর্তৃপক্ষ কর্মীদের বেতন বাড়াতে বাধ্য হয় এবং গত বছরের মার্চের তুলনায় পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ বাড়ানো হয় মজুরি, ২০০৭ সালের পর যা তৃতীয় বৃহত্তম মজুরি বৃদ্ধি বলে জানায় শ্রম বিভাগ।