মূল ব্যবসায় পিছিয়ে পড়ছে কনফিডেন্স সিমেন্ট

পলাশ শরিফ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের অন্যতম কোম্পানি কনফিডেন্স সিমেন্টের পথচলা শুরু হয়েছিল নব্বইয়ের দশকে। গ্রাহকের আস্থাও অর্জন করেছিল কোম্পানিটি। সময়ের স্রোতে দেশি-বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির বিপরীতে সিমেন্টের দাম কমে যাওয়াসহ বেশকিছু কারণে বর্তমানে মূল ব্যবসায় পিছিয়ে পড়েছে কনফিডেন্স। সিমেন্ট ব্যবসা থেকে আয় বাড়লেও কোম্পানিটির পরিচালন মুনাফা কমছে। তবে মূল ব্যবসায় পিছিয়ে পড়লেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও সহযোগী কোম্পানির মুনাফার ওপর ভর করে আয়-মুনাফার প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে কোম্পানিটি।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে সিমেন্ট বিক্রি করে প্রায় ৩৪৮ কোটি ১২ লাখ টাকা আয় করেছিল কনফিডেন্স সিমেন্ট। এর বিপরীতে উৎপাদন খরচ ছিল প্রায় ২৭৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। বিক্রয়-বিপণন ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় মেটানোর পর ওই আর্থিক বছরে প্রায় ৬০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা পরিচালন মুনাফা করেছিল কোম্পানিটি। অন্যদিকে সর্বশেষ সমাপ্ত (২০১৬-১৭) আর্থিক বছরে সিমেন্ট বিক্রি থেকে কোম্পানিটির আয় প্রায় ১৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা বেড়ে প্রায় ৩৬২ কোটি ৯৩ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর বিপরীতে উৎপাদন খরচ প্রায় ২২ কোটি ৮৯ লাখ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ কারণে কোম্পানিটির পরিচালন মুনাফা পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রায় ৪৪ কোটি পাঁচ লাখ টাকা বা ৭২ দশমিক ৫৮ শতাংশ কমে প্রায় ১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

কনফিডেন্স সিমেন্টের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও কোম্পানি সচিব নেওয়াজ মোহাম্মদ ইকবাল ইউসুফ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সিমেন্টের বাজার এখন অনেক প্রতিযোগিতাপূর্ণ। ব্যবসায় টিকে থাকার জন্য সিমেন্টের দাম কমাতে হচ্ছে। অথচ কয়েক বছরে উৎপাদন খরচ, ব্যবস্থাপনা, বিক্রয়-বিপণনসহ সব ধরনের ব্যয় বেড়েছে। এ কারণেই সিমেন্ট ব্যবসায় কিছুটা মন্দাবস্থা চলছে। উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে আমরা উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়েছি। তবে মূল ব্যবসায় পিছিয়ে পড়লেও সহযোগী কোম্পানি থেকে লভ্যাংশ বাড়ছে। একইভাবে এখন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ থেকেও লভ্যাংশ পাচ্ছি। শেয়ারের দর বৃদ্ধিতে প্রফিট গেইনও হচ্ছে। সিমেন্ট-ই মূল ব্যবসা, মূল ব্যবসাকে পাশ কাটিয়ে ভিন্ন খাতে বিনিয়োগের বেশি মনোযোগ দেওয়ার কোনো বিষয় নেই। আমরা সিমেন্ট ব্যবসাকেও সমান প্রাধান্য দিচ্ছি।’

জানা যায়, মূল ব্যবসায় পিছিয়ে পড়লেও সহযোগী কোম্পানি থেকে পাওয়া লভ্যাংশ ও পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ করে পাওয়া লভ্যাংশের ওপর ভর করে কনফিডেন্স সিমেন্টের কর-পরবর্তী মুনাফায় ধারা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ সমাপ্ত (২০১৬-১৭) আর্থিকবছরে সহযোগী কনফিডেন্স ইলেকট্রিক লিমিটেড, এনার্জিপ্যাক-কনফিডেন্স পাওয়ার ভেঞ্চার লিমিটেড ও কনফিডেন্স পাওয়ারÑএই তিন প্রতিষ্ঠানের মুনাফার অংশ হিসেবে প্রায় ২৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা আয় করেছে। পাঁচ বছর আগে ওই তিন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে প্রায় তিন কোটি আট লাখ টাকা লোকসান গুনেছিল কনফিডেন্স সিমেন্ট। অর্থাৎ সহযোগী তিন কোম্পানির মুনাফার অংশ সর্বশেষ আর্থিক বছরে কনফিডেন্স সিমেন্টের কর-পরবর্তী মুনাফা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। একইভাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেও সুফল পাচ্ছে কোম্পানিটি। সর্বশেষ সমাপ্ত আর্থিকবছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে করা বিনিয়োগ থেকে লভ্যাংশ ও শেয়ার বিক্রয়লব্ধ আয় হিসেবে মোট প্রায় ২১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা পেয়েছে কনফিডেন্স সিমেন্ট; যা পাঁচ বছর আগেও এ খাত থেকে মাত্র ১৫ হাজার টাকা আয় করেছিল কোম্পানিটি। এছাড়া গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে ঋণ পরিশোধে ব্যয় প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা কমাও কোম্পানিটির জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি সর্বশেষ সমাপ্ত আর্থিক বছরে প্রায় ৫৫ কোটি ছয় লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে। ওই বছরে বিনিয়োগকারীদের ১৫ শতাংশ নগদ ও ২০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। কনফিডেন্স সিমেন্টের প্রায় পাঁচ কোটি ৩৯ লাখ শেয়ারের মধ্যে ৩০ শতাংশ উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৪ দশমিক ১৩ শতাংশ, দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৫ দশমিক ৮২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০