মূল মার্কেটে ফিরছে চার কোম্পানি ওটিসি মার্কেটে বড় সংস্কার

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: অবশেষে বড় ধরনের সংস্কার হচ্ছে পুঁজিবাজারের ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটের। লেনদেন পদ্ধতি সহজ না হওয়ার পাশাপাশি চাহিদা না থাকায় এ মার্কেটে শেয়ারের বিক্রেতা থাকলেও ক্রেতা মেলা কষ্টসাধ্য। এ কারণে গত কয়েক বছরে এ মার্কেটের লেনদেন উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে। ফলে ওটিসি মার্কেটের বিনিয়োগকারীদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ কারণে মার্কেটটির বড় ধরনের সংস্কার আনছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে বিষয়টি জানা যায়।

বর্তমানে এ মার্কেটে তালিকাভুক্ত ৬৪টি কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে চার কোম্পানি অচিরে মূল মার্কেটে ফিরবে। ইতোমধ্যে মূল মার্কেটে ফেরার জন্য সব ধরনের কার্যক্রম শেষ। যে কোনো সময় ঘোষণা দিয়ে কোম্পানিগুলোকে মূল মার্কেটে ফিরিয়ে আনা হবে। চলতি সপ্তাহে এ ঘোষণা আসতে বলে নিশ্চিত করেছে বিএসইসির একটি বিশ্বস্ত সূত্র। কোম্পানিগুলো হচ্ছেÑতমিজউদ্দিন টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারার কোম্পানি লিমিটেড, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড ও মুন্নু ফেব্রিক্স লিমিটেড।

গত অর্থবছর মুনাফায় ফিরেছে মুন্নু ফেব্রিক্স। ২০১৯-২০ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস বেড়েছে ৬ পয়সা। এ সময় কোম্পানির ইপিএস হয়েছে ১১ পয়সা। আগের অর্থবছর ইপিএস ছিল ৫ পয়সা। তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল মিলস সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এ কোম্পানিটিও নিয়মিত উৎপাদনে ফিরেছে।

অন্যদিকে ২০১৮ সালে ‘বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড’ ও ‘পেপার প্রসেস অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড’ বিনিয়োগকারীদের ২০০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির অনুমোদন না পাওয়ায় তা বণ্টন করা যায়নি।

জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারমান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, এ মার্কেটের সমস্যা অনেক। ওটিসিতে কোনো কোম্পানি থাকা মানেই তাদের সুবিধা। এখানে থেকে তারা নানা চালাকি করতে পারে। সে কারণে এ মার্কেটের সংস্কার জরুরি। এই মার্কেটের চারটি প্রতিষ্ঠান শিগগির মূল মার্কেটে ফিরছে।

এদিকে আরেকটি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে তালিকাচ্যুতির অপেক্ষায় রয়েছে আরও ১৫টি কোম্পানি। এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অন্যদিকে বর্তমানে যে কোম্পানিগুলো রয়েছে তার মধ্য থেকে ১৪ থেকে ১৫টি কোম্পানিকে স্বল্পমূলধনি মার্কেটে পাঠানোর কথা ভাবছে বিএসইসি। এছাড়া প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি প্রতিষ্ঠানটিকে এটিবি প্ল্যাটফর্মে পাঠানো হবে। তবে এখন পর্যন্ত কোন কোম্পানির অবস্থান কোথায় হচ্ছে, তা চূডান্ত হয়নি। শিগগির এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, সর্বশেষ ২০২০ সালে ওটিসি মার্কেটে শেয়ার লেনদেন আগের বছরের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে ৯৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এক বছরে ওটিসি মার্কেটে মোট ১০ লাখ ১৮ হাজার ২৩টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এসব শেয়ারের বাজারমূল্য এক কোটি ৯ লাখ ২১ হাজার ৪৯ টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে আশঙ্কাজনক হারে কম। আগের বছর (২০১৯) ওটিসি মার্কেটে শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ ছিল এক কোটি ৫৩ লাখ ৭৬ হাজার ৪৭৪টি। আর এসব শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ২২ কোটি ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৮৯২ টাকা।

ওটিসি মার্কেটের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, এখানে লেনদেন পদ্ধতি খুব কঠিন। যে কারণে ২০১৮ সালের শুরুতে এ মার্কেটের পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয় বিএসইসি।

২০১৮ সালে ওটিসি মার্কেট থেকে অস্তিত্বহীন কোম্পানি বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ মার্কেটের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে যে প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই এবং যেসব প্রতিষ্ঠান আইন মেনে চলে না, সেসব প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে ওটিসি মার্কেট পুনর্গঠন করার কথা ভাবা হয়।

পরে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন বিএসইসিতে জমা পড়ে। সেখান থেকে বলা হয়, শিগগির এ প্রতিবেদন নিয়ে বৈঠক করবে বিএসইসি কর্তৃপক্ষ। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে ওটিসি মার্কেট পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কিন্তু এরপর বিষয়টিতে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ওটিসিতে থাকা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব একেবারে নেই। কোম্পানিগুলো হলো বাংলাদেশ ইলেকট্রিসিটি মিটার কোম্পানি (বেমকো), চিক টেক্সটাইল, রাসপিট ডাটা, রাসপিট ইনকরপোরেশন, এম হোসেন গার্মেন্ট, ফার্মাকো, আমান সি ফুড, জার্মান বাংলা ফুড, মেটালিঙ্ক, রাঙামাটি ফুড ও সালেহ কার্পেট। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের প্রায় চার কোটি ৮৭ লাখ শেয়ার রয়েছে, আনুমানিক যার বাজারমূল্য ৫০০ কোটি টাকা। বাদ পড়ার তালিকায় এসব কোম্পানির থাকার সম্ভাবনা বেশি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০