নিজস্ব প্রতিবেদক: বড় প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্বচ্ছতা আনয়ন ও ভ্যাট ফাঁকি রোধে উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেজন্য বছরে পাঁচ কোটি টাকার বেশি লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ সফটওয়্যারের আওতায় আনা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সব লেনদেন হবে এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে, যা সহজে দেখতে পাবে এনবিআর। সফটওয়্যার নিতে সক্ষম সব প্রতিষ্ঠানের এ সফটওয়্যার নেওয়া বাধ্যতামূলক করেছে এনবিআর। এ সফটওয়্যার নিতে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল এনবিআর। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের অনুরোধ আর আশানুরূপ সফটওয়্যার না নেওয়ায় সময় ২৯ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সাধারণ আদেশ সংশোধন করে এ সময় বাড়ানো হয়।
এনবিআরের প্রথম সচিব (মূসক নীতি) হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার স্বাক্ষরিত সংশোধিত আদেশে বলা হয়, ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা, ২০১৬’-এর বিধি ১১৮ ‘ক’-এর ক্ষমতাবলে ৩০ জুন, ২০১৯-এর সাধারণ আদেশ-১৬ সংশোধন করা হলো। আদেশের ১৩ অনুচ্ছেদে ৩১ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৯ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হলো।
এনবিআর সূত্র জানায়, সফটওয়্যার নিজেরা তৈরি করেও ব্যবহার করা যাবে। তবে সেই সফটওয়্যার ব্যবহারে এনবিআর থেকে অনুমতি নিতে হবে। এনবিআরের সার্ভারের সঙ্গে এ সফটওয়্যারের সংযোগ থাকবে। এরই মধ্যে বেশ কিছু বড় কোম্পানি নিজেরা সফটওয়্যার তৈরি করে এনবিআরের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে। আবার যেসব প্রতিষ্ঠান নিজেরা সফটওয়্যার তৈরি করবে না, তাদের এনবিআর অনুমোদিত সফটওয়্যার ফার্ম থেকে সফটওয়্যার কিনে নিতে হবে। এনবিআর এ পর্যন্ত ২৫টি সফটওয়্যার ফার্মকে অনুমোদন দিয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছেÑইউওয়াই সিস্টেমস লি., ইনোভিয়া টেকনোলজিস, ধ্রæপদী টেকনো কনসোর্টিয়াম লি., ডিভাইন আইটি লি., সিম্ফনি সফটটেক লি., বেস্ট বিজনেস বন্ড লি., সিএসএল সফটওয়্যার রিসোর্সেস লি., অ্যালাইড ইনফরমেশন টেকনোলজি, যুবসফট ইনফরমেশন সিস্টেমস লি., ক্রসর লি., মিডিয়া সফট, ইউনিসফট সিস্টেমস লি., লজিক সফটওয়্যার লি., ইউবেনস টেকনোলজি লি., সাউথটেক লি., শুভ্র সিস্টেম লি., টেকনো হ্যাভেন কোম্পানি লি., এফসিটিবি টেকনোলজি লি., জাব এরাফ লি., এটিআই লি., কনফিডেন্স সফটওয়্যার লি., মাইক্রোকোড টেকনোলজি লি., অপাস টেকনোলজি লি. ও মাল্টিব্র্যান্ড ইনফোটেক লি.। প্রতিষ্ঠানকে এসব সফটওয়্যারে প্রতিটি লেনদেনের তথ্য আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করতে পাঁচ কোটি টাকার বেশি লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের এ সফটওয়্যার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) মূল্য সংযোজন কর শাখাসহ এনবিআরের আওতাধীন ১২টি ভ্যাট কমিশনারেট রয়েছে। এতে পাঁচ কোটি টাকা লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় পাঁচ শতাধিক, যার মধ্যে এলটিইউতে রয়েছে ১৫৬টি প্রতিষ্ঠান। ভ্যাটের লক্ষ্যমাত্রার এক-তৃতীয়াংশই এ পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠান জোগান দেয়। তবে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে লেনদেনের কারণে নিরীক্ষার সময় হিসাবপত্র পাওয়া যায় না। হিসাবপত্র লুকিয়ে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই বছরের পর বছর ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে। তারা বলছেন, এনবিআর প্রতিবছর এসব প্রতিষ্ঠানের দাখিলপত্র যাচাই, অভিযান আর নিরীক্ষার মাধ্যমে বিপুল ফাঁকি উদ্ঘাটন ও মামলা করে। এসব প্রতিষ্ঠানের লেনদেনে স্বচ্ছতা এলে বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত ভ্যাট আদায় হবে।
এনবিআরের গত ৩০ জুন এ-সংক্রান্ত সাধারণ আদেশে বলা হয়, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা, ২০১৬-এর বিধি ১১৮-ক অনুযায়ী, যেসব ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ পূর্ববর্তী আর্থিক বছরের মোট বিক্রি বা টার্নওভার পাঁচ কোটি টাকা বা তার বেশি, সেসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে ভ্যাট-সংক্রান্ত দলিলাদি ও হিসাবপত্র এনবিআর-নির্ধারিত ভ্যাট সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংরক্ষণের এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভ্যাট কমিশনারেট বা এনবিআর-নিয়ন্ত্রিত কম্পিউটার সিস্টেমে পাঠাতে হবে।
আদেশ অনুযায়ী, পরীক্ষিত ও অনুমোদিত যেকোনো সফটওয়্যার নির্মাণকারী ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সফটওয়্যার নিতে হবে। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান ভিন্ন কোনো উৎস থেকে সফটওয়্যার সংগ্রহ করলে বা নিজেরা সফটওয়্যার তৈরি করলে এনবিআর থেকে অনুমোদন নিতে হবে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটে আবেদন করতে হবে। কমিশনার যাচাই শেষে এনবিআর সদস্যের (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) কাছে পাঠাবেন। যাচাই শেষে অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানের লেনদেন পাঁচ কোটি টাকার কম, সেসব প্রতিষ্ঠান এ সফটওয়্যার ব্যবহার করতে চাইলেও পারবে।