এপিলেপসি বা মৃগীরোগ স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতাজনিত একটি রোগ। মৃগী আর খিঁচুনি বা কনভালশন এক নয়, তবে মৃগীরোগের একটি উপসর্গ হলো খিঁচুনি।
সুস্থ একজন মানুষ যদি হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে কাঁপতে থাকেন বা খিঁচুনির শিকার হন, চোখ-মুখ উলটিয়ে হাত-পা ছুড়ে কাতরান অথবা অজ্ঞান হয়ে যান, মুখ দিয়ে ফেনা বা লালা বের হয় অথবা হঠাৎ অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন, তবে তাকে মৃগীরোগী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
আর শিশুদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে সংক্রমণ হলে অথবা জন্মের সময় মাথায় কোনো আঘাত পেলে, অক্সিজেন পেতে দেরি হলে অথবা শিশুর ওজন কম হলে বা সময়ের আগে জন্ম নিলে কখনও কখনও মৃগীরোগ হতে দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে শিশুর চোখের পাতা স্থির হয়ে যায় বা একদৃষ্টে চেয়ে থাকে।
কীভাবে বুঝবেন: হঠাৎ শরীরের কোনো অংশে খিঁচুনি শুরু হওয়া ও পর্যায়ক্রমে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়া, হঠাৎ নমনীয়ভাবে ঢলে পড়া, শরীর শক্ত হয়ে গিয়ে হঠাৎ পড়ে যাওয়া, জ্ঞান হারানো, ঘন ঘন কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়া। শিশুদের শরীর হঠাৎ ঝাঁকি খাওয়া, হঠাৎ মাথা বা পিঠ কিংবা পুরো শরীর সামনে ঝুঁঁকে পড়া, হাত থেকে হঠাৎ কিছু ছিটকে পড়া, হঠাৎ অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করা এবং হাত, পা ও মুখের অস্বাভাবিক নাড়াচাড়া শুরু হওয়া, হঠাৎ শরীরের কোনো অংশে ভিন্ন ধরনের অনুভূতি সৃষ্টি হওয়া প্রভৃতি।
আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিরাপদ জায়গায় রাখতে হবে। কাপড়চোপড় ঢিলেঢালা করে দিতে হবে। কাছাকাছি আগুন, গরম পানি বা ধারালো বস্তু থাকলে সরিয়ে নিতে হবে। আরামদায়ক অবস্থায় কাত করে শুইয়ে দিতে হবে, যাতে মুখের লালা বাইরে পড়ে যেতে পারে। অনেক সময় রোগীকে চেপে ধরা হয়, নাকে জুতা ধরা হয়; এগুলো করা যাবে না। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
চিকিৎসা: বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খিঁচুনির কারণ নির্মূল হলে রোগ ভালো হয়ে যায়। তবে প্রাইমারি এপিলেপসির চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি, এমনকি সারা জীবনও প্রয়োজন হতে পারে।
অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ
নিউরোসার্জারি বিভাগ, বিএসএমএমইউ