আমাদের গ্রামাঞ্চলে মৃগী হলে অনেক সময় একে জিনে ধরা, বা ভূতের আসর হিসেবে ধারণা করা হয় এবং ঝাড়ফুঁক করা হয়, যা ঠিক নয়। মৃগী আসলে স্নায়ুতন্ত্রের একটি জটিলতা।
কেন হয় খিঁচুনি: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খিঁচুনি বা মৃগী রোগের পেছনে তেমন কোনো কারণ পাওয়া যায় না। এ ধরনের খিঁচুনিকে প্রাইমারি এপিলেপসি বলা হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে সংক্রমণ হলে অথবা জšে§র সময় মাথায় কোনো আঘাত পেলে, অক্সিজেন পেতে দেরি হলে, অথবা শিশুর ওজন কম হলে বা সময়ের আগে জš§ নিলে, তাদের কখনও কখনও মৃগী রোগ হতে দেখা যায়। বড়দের রক্তে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হলে, শর্করা কমে গেলে, মাথায় কোনো আঘাত পেলে বা টিউমার হলে, মস্তিষ্কে সংক্রমণ বা রক্তক্ষরণ হলে খিঁচুনি হতে পারে। মৃগী রোগীদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত ওষুধ সেবনেও খিঁচুনি দেখা দিতে পারে। তবে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো কারণই জানা যায় না।
করণীয়: আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিরাপদ জায়গায় রাখতে হবে। পরিধানের কাপড়চোপড় ঢিলেঢালা করে দিতে হবে। কাছাকাছি আগুন, গরম পানি ও ধারালো কিছু থাকলে সরিয়ে ফেলতে হবে। আরামদায়ক অবস্থায় কাত করে শুইয়ে দিতে হবে, যাতে মুখের লালা বাইরে পড়ে যায়। এ সময় মুখে চামচ, পানি বা কোনো কিছুই দেয়া যাবে না। এতে দাঁত বা জিহ্বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, শ্বাসকষ্টও শুরু হতে পারে। অনেক সময় আমরা রোগীকে চেপে ধরি যেন খিঁচুনি না হয়, নাকে জুতা ধরা হয়Ñএগুলো করা যাবে না। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
রোগনির্ণয়: রোগীর ইতিহাস এবং সম্ভব হলে খিঁচুনির ভিডিও রোগনির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মস্তিষ্কের ইলেকট্রোএনসেফালোগ্রাম উপসর্গভিত্তিক রোগনির্ণয়ে সাহায্য করতে পারে। মস্তিষ্কের ইমেজিং-সিটি স্ক্যান বা এমআরআই এবং বিশেষ ক্ষেত্রে আরও কিছু পরীক্ষা লাগতে পারে। যেমন রক্তের ইলেকট্রোলাইট, শর্করা, মেরুদণ্ডের রস প্রভৃতি।
চিকিৎসা: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খিঁচুনির কারণ নির্মূল হলে এ রোগ ভালো হয়ে যায়। তবে চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি, এমনকি সারাজীবনও প্রয়োজন হতে পারে। তাই একজন স্নায়ুরোগ (নিউরোলজি) বিশেষজ্ঞের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মৃগীরোগের চিকিৎসা করানো উচিত। কারণ শিশুদের চিকিৎসা যথাসময়ে না হলে মেধা ও বুদ্ধিমত্তা হ্রাস পায়।
অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ
নিউরোসার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
