প্রথমে মাটি পরীক্ষা। এরপর প্রয়োজনীয় সার ও তার পরিমাণ নির্ধারণ। এগুলো বেশ জটিল কাজ। এজন্য বারবার কৃষি কর্মকর্তার কাছে ধরনা দিতে হয়। ফলে নষ্ট হয় সময়। বেড়ে যায় শ্রম। এসব থেকে কৃষককে মুক্তি দিচ্ছে ‘মৃত্তিকা’।
নামের সঙ্গে মাটির গন্ধ লেগে আছে সফটওয়্যারটির গায়ে। আমাদের কৃষকের হাতের নাগালে রয়েছে প্রযুক্তিটি। এর কল্যাণে মাটি চাহিদার খুঁটিনাটি জেনে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছেন কৃষক নিজেই।
ওই সফটওয়্যার ব্যবহার করে মাটির গুণগতমান পরীক্ষা, প্রয়োজনীয় সারের তালিকা ও পরিমাণ নিরূপণ করতে পারছেন কৃষক। এ সফটওয়্যার তৈরি করেছে ‘গ্রামীণ ইন্টেল সোস্যাল বিজনেস’ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। হেলভেটাস, প্রাকটিক্যাল অ্যাকশন, সলিডারিডারড নেটওয়ার্ক এশিয়া, এসিআই ফার্টিলাইজার, রহিম আফরোজ রিনিউয়েবল এনার্জি, রুরাল রিকনস্ট্রাকশন ফাউন্ডেশন, গণ উন্নয়ন কেন্দ্র- এ ৯টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে সফটওয়্যারটি পৌঁছে দিচ্ছে গ্রামীণ ইন্টেল। এতে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি মাটির গুণগতমানও অক্ষুন্ন থাকছে।
গ্রামীণ ইন্টেল সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে পুরোনো প্রযুক্তি ও গতানুগতিক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কৃষিকাজ করা হয়। এছাড়া বছরের পর বছর জমিতে একই ধরনের ফসল ফলানোর জন্য জমির উর্বরতা শক্তি কমে যায়। আবার অতিরিক্ত সার ব্যবহার করার জন্যও ফসলের ক্ষতি হয়। তাই মাটির উর্বরতা শক্তি পরীক্ষা করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। বিশেষ করে সারের সঠিক ব্যবহার হয় না এখানে। কীটনাশক বা বীজ বাছাইয়ে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
এতে চাষবাদের খরচ বেড়ে যায়। অথচ মাটির মান জেনে ও বুঝে প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। এ কারণে গ্রামীণ ইন্টেল ‘মৃত্তিকা’ তৈরি করেছে। যা সাধারণ মানের কম্পিউটার, ট্যাবলেট ও স্মার্টফোনে ব্যবহার করা যায়।
মাটির গুণ বিশ্লেষণ ও সার সুপারিশ সংক্রান্ত সফটওয়্যার এটি। এর মাধ্যমে কৃষক পরিমিত সার ব্যবহার করে সারের খরচ কমিয়ে আনতে পারেন। পাশাপাশি ভালো ফলন নিশ্চিত করে তার জীবনমানে উন্নতি ঘটাতে পারেন। সার ও মাটির তথ্যের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্তিকার মাধ্যমে স্থানীয় সার সরবরাহকারী ও সারের বাজারদর সম্পর্কেও তথ্য জানা যায় এখানে।
সার সুপারিশ নীতিমালা প্রকাশ করেছে সরকার। এখানে দেশের সব এলাকার মাটির উর্বরতা পরীক্ষা করে কোন ফসলের জন্য কতটুকু পুষ্টি দরকার তার একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। মৃত্তিকায় তালিকাটি আরও আধুনিক করে সংযুক্ত করেছে গ্রামীণ ইন্টেল। কখন সার প্রয়োগ করতে হবে সেটাও বলে দেয় মৃত্তিকা। একেক স্থানে জমির উর্বরতা একেক রকম। তাই একেক জমিতে একেক ধরনের ফসল চাষে সারের ধরন ও পরিমাণ ভিন্ন। মৃত্তিকা খুব সহজে এ সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে।
মৃত্তিকা সফটওয়্যার ব্যবহারের জন্য কম্পিউটার বা স্মার্টফোন, মাটি পরীক্ষার সরঞ্জাম ও সফটওয়্যার কেনা জরুরি। পর্যাপ্ত জ্ঞান ও আর্থিক সহায়তার অভাবে অনেক কৃষক সে পথে নাও হাঁটতে পারেন। তাই তৃণমূল পর্যায়ের একজন উদ্যোক্তা স্বল্প বিনিয়োগে কৃষককে এ সেবা দিতে পারেন। এ বাবদ কিছুটা আয় করতে পারেন আপনিও। আট থেকে দশ হাজার টাকায় স্মার্টফোন, আড়াই হাজার টাকায় মৃত্তিকা সফটওয়্যার, ১৫ হাজার টাকায় একটি মাটি পরীক্ষার যন্ত্র ও আট হাজার টাকায় রাসায়নিক পণ্য কিনে কৃষককে সেবা দিতে পারেন। মাটি পরীক্ষার যন্ত্র ও রাসায়নিক দিয়ে কমপক্ষে ১০০ জন কৃষককে সেবা দেওয়া সম্ভব।
এ সফটওয়্যারে কৃষকের সব রকম তথ্য ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করা যায়। বর্তমানে ৪০টিরও বেশি উপজেলায় কৃষকের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে ‘মৃত্তিকা’। বাংলাদেশ ছাড়া ভারত ও কম্বোডিয়ার কৃষকরাও মৃত্তিকা সফটওয়্যার ব্যবহার করছে।
‘মৃত্তিকা’য় মুক্তির পরশ

Add Comment