বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির (বিইউ) স্টার্টআপ অ্যাকসিলারেটর সম্প্রতি ‘মেকিং সেন্স অব বিগ ডেটা’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, সরকার তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নীতিগত সহায়তা ও পরিবেশ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। প্রয়োজনে সার্বিক সহায়তা করা হবে। তিনি নতুন উদ্ভাবক-উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারের ১০০ কোটি টাকা ও গবেষণাকর্মের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা জানান এ সেমিনারে। একই সঙ্গে আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে ২৪০০ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মেধাবী শিক্ষার্থীকে একটি করে ল্যাপটপ দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ১০০ দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীকেও একটি করে ল্যাপটপ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কাজী জামিল আজহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির আ. বারি। অতিথি ছিলেন লাইট ক্যাসেল পার্টনার্সের প্রধান নির্বাহী বিজন ইসলাম। সেমিনারে বক্তব্য রাখেন প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মজিবুল হক ও বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) আনত সাইফুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিইউ’র স্টার্টআপ অ্যাকসিলারেটরের নির্বাহী উপদেষ্টা টিনা এফ জাবিন। বিইউ’র ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ কামরুল হাসান, রেজিস্ট্রার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. মাহবুবুল হক ও পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার কাজী তাইফ সাদাত, বিভাগীয় প্রধানরা, স্টার্টআপসহ অনেক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি ২০২৩ সালের মধ্যে আইসিটি খাতে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় ও ১০ লাখ কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সরকারের চলমান কর্মকাণ্ডের বিষয়টি সেমিনারে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রংপুরে আইসিটি পার্ক ছাড়াও দেশে আরও ২৮টি পার্ক নির্মাণ করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী আইসিটি খাতে বর্তমান সরকারের ১২ বছরে নানা মেগা প্রকল্পসহ উন্নয়নের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন। এ খাতে অপার সম্ভাবনার যে সুযোগ সরকার সৃষ্টি করছে, তা গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, স্টার্টআপ অ্যাকসিলারেটরটির প্ল্যাটফর্মটি নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণের প্ল্যাটফর্ম। এ প্রসঙ্গে তিনি ছয় বছর আগে বিইউতে দেশের প্রথম থ্রিডি প্রিন্টার ল্যাব উদ্বোধনের কথা উল্লেখ করে বলেন, স্টার্টআপ অ্যাকসিলারেটরের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আগ্রহী সব শিক্ষার্থীকে উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তা করার কার্যক্রম বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিই প্রথম শুরু করেছে। তিনি এখানে ডেটা অ্যানালাইসিস ল্যাব প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন। এখানে শুধু বিইউ’র ছাত্র-শিক্ষকই নয়, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের
ছাত্র-শিক্ষকও গবেষণার কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। এ ল্যাবে উদ্ভাবিত পণ্য বাজারজাতেও আইসিটি বিভাগ ব্যবস্থা নেবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক আ. বারি ডেটা, ডেটার ধরন, ডেটা বিজ্ঞান, ডেটা প্রক্রিয়াকরণ, সমস্যা সমাধানে ডেটার ব্যবহার, বৃহৎ ডেটার পরিমাণ, গতি, বৈচিত্র্য ও এর দামের ওপর বিষদ আলোচনা করেন। সর্বস্তরে ডেটার ব্যবহার, ভবিষ্যৎ ঘটনাপ্রবাহ ও পরিবর্তন অনুধাবনে এর গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি। ডেটা সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, ক্ষমতা উদ্যোক্তাদের কীভাবে সহায়তা করবে এবং দেশ ও পৃথিবীর পরিবর্তনে কী ভূমিকা রাখবেÑ তা ব্যাখ্যা করেন তিনি।
অতিথি বক্তা বিজন ইসলাম সহজ, পাঠাও, বিকাশের সূচনা ও উত্থানে ডেটার ওপর দৃষ্টিপাত করে এর সঠিক ব্যবহার বা প্রয়োগ বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যেতে পারেÑ সে বিষয়ে ধারণা দেন। উদ্যোক্তাদের এসব বিশ্লেষণ ও ব্যবহারের পরামর্শ দেন প্রকল্প পরিচালক।
সৈয়দ মজিবুল হক তার বক্তব্যে উদ্যোক্তা তৈরি করতে হলে বৃহৎ ডেটা বিশ্লেষণের কৌশল জানা প্রয়োজন উল্লেখ করেন। তিনি ৫০ কোটি টাকা উদ্যোক্তাদের গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কীভাবে ব্যয় করা হবে, সে বিষয়ে সহায়তা দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
হাইটেক পার্কের পরিচালক (প্রশাসন) শফিকুর রহমান বলেন, হাইটেক কর্তৃপক্ষ ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে শুধু হাইটেক, সফটওয়্যার ও টেকনোলজি পার্কের মতো সুবিধা সৃষ্টি করছে তা-ই নয়, ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের গবেষণার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ল্যাবও করে দিচ্ছে। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতেও ইনোভেশন ল্যাব করা হবে। উদ্যোক্তারা তা ব্যবহারের সুযোগ পাবেন।
সেমিনারের শেষ পর্যায়ে প্রশ্নোত্তরপর্বে উদ্যোক্তা ও শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেন আ. বারি ও বিজন ইসলাম।