Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 8:26 pm

মেক্সিকোর গাড়িতে শুল্ক আরোপ করবেন ট্রাম্প

শেয়ার বিজ ডেস্ক: নির্বাচনে বিজয়ী হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প মেক্সিকোর গাড়ি আমদানিতে ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। নির্বাচনী প্রচারণার মাঝে এই ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী। খবর: রয়টার্স।

মেক্সিকোর গাড়িতে শুল্ক আরোপের বিষয়টি চলতি সপ্তাহে উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের জুনাউ বিমানবন্দরের নির্বাচনী সমাবেশে ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। ওই সব (আমদানি করা) গাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ঢুকতে দিতে পারি না।
এর আগে আরেক ঘোষণায় ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে আমদানি করা গাড়ি ও ট্রাকে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। দেশীয় গাড়িশিল্পকে উৎসাহিত করতে তিনি এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন।

অর্থনীতির ক্ষেত্রে ট্রাম্প মূলত সুরক্ষাবাদী হিসেবে পরিচিত। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর দেশীয় শিল্প পুনরুদ্ধারে তিনি চীন থেকে আমদানি করা পণ্যে বিপুল পরিমাণে শুল্ক আরোপ করেন। রীতিমতো চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করে দেন তিনি। এরপর শুরু করেন প্রযুক্তিযুদ্ধ। ২০২০ সালে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্র সেই নীতি থেকে সরে আসেনি। সম্প্রতি চীনে উৎপাদিত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শুল্ক বৃদ্ধি করেছে জো বাইডেন প্রশাসন।

যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি চালক ও অবকাঠামো নিয়ে চীনা কোম্পানির ডেটা সংগ্রহের বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাইডেন প্রশাসন। সেই সঙ্গে যানবাহনের ইন্টারনেট এবং নেভিগেশন সিস্টেমে বিদেশি হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাও তুলে ধরেছে। এই সিদ্ধান্ত চীনের যানবাহন, সফটওয়্যার এবং উপাদানগুলোর ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞার বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। বাইডেন প্রশাসন চীনা আমদানি পণ্যে বড় মাত্রায় শুল্কহার বাড়িয়েছে, যার মধ্যে বৈদ্যুতিক যানবাহনের ওপর শুল্ক এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি ও মূল খনিজগুলোর ওপর নতুন শুল্ক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কমার্স সেক্রেটারি জিনা রাইমন্ডো গত মে মাসে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের যানবাহনে চীনের সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যারের ব্যবহারে ঝুঁকি রয়েছে। ভেবে দেখুন, সড়কে থাকা কয়েক লাখ গাড়ির সফটওয়্যার হুট করে অকার্যকর হয়ে গেলে তা কতটা বিপজ্জনক হবে।

চীন থেকে আমদানি করা যানবাহনে ‘কান্টেকটেড গাড়ি প্রযুক্তি’ (ইন্টারনেট, ব্লুটুথের সঙ্গে যুক্ত প্রযুক্তি) জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি কিনা তা গত ফেব্রুয়ারিতে তদন্তের নির্দেশ দেন জো বাইডেন।
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩০ লাখ গাড়ি রপ্তানি করেছে মেক্সিকো। এর প্রায় অর্ধেক জেনারেল মোটরস, ফোর্ড মোটর কোম্পানি ও স্টেলান্টিসের মতো শীর্ষ কোম্পানিগুলোর গাড়ি; যদিও এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ট্যাক্স পলিসি সেন্টার বলেছে, মেক্সিকো থেকে আমদানি করা গাড়ির ওপর শুল্ক আরোপ করা হলে শুধু যে আমদানিক করা গাড়ির দাম বাড়বে তা নয়, এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত ও ব্যবহৃত গাড়িরও মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।

মেক্সিকোর বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই সোচ্চার। এর আগে ক্ষমতায় থাকাকালীন মেক্সিকোর অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করেছিলেন তিনি। মার্কিন প্রশাসন যে দেয়াল নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল সেটির দৈর্ঘ্য হবে ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার। তার আগে পরিকল্পনা ছিল ৩ হাজার ১০০ কিলোমিটার দেয়াল নির্মাণের। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার কোটি ডলার। ট্রাম্প প্রাথমিকভাবে মনে করেছিলেন, এই দেয়াল নির্মাণে ১০ থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার ব্যয় হবে। নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছিলেন, এই ব্যয়ের পুরোটা আদায় করা হবে মেক্সিকোর কাছ থেকে। ঐ সময় হোয়াইট হাউজের চিফ অফ স্টাফ জন কেলি বলেন, তারা এখন ভিন্ন উপায়ে অর্থ জোগানোর কথা চিন্তাভাবনা করছেন। যেমন, ভিসা ফি বৃদ্ধির মাধ্যমে এবং নাফটা বাণিজ্য চুক্তিতে নতুনভাবে দরকষাকষির মাধ্যমে। যদিও পরবর্তী সময়ে দেয়ালের একটি অংশ ভেঙে ফেলা হয়।

ক্ষমতার থাকায় সময় ট্রাম্প বলতেন, মুক্ত বাণিজ্যকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে, যদি তা বৈষম্যহীন এবং উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক হয়। সেটা নিশ্চিত করতে সবাইকে একই রকম নীতি অনুসরণ করতে হবে