Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:17 am

মেগা প্রকল্পের জন্য ‘জি-২০’ নেতাদের সহায়তা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বাংলাদেশে জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য নেয়া মেগা প্রকল্পে জি-২০ নেতাদের সহায়তা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজস্ব অর্থায়নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘জনগণের জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর জন্য আমরা আরও কয়েকটি মেগা প্রকল্প হাতে নিচ্ছি। এসব প্রকল্পের জন্য আমাদের উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে ব্যাপক আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন। এ বিষয়ে জি-২০ সহায়ক হবে বলে আমি আশা করি।’ ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘ভয়েস অব দ্য সাউথ সামিট-২০২৩’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গতকাল গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। টেকসই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ‘বৈশ্বিক দক্ষিণের’ (গ্লোবাল সাউথ) উন্নয়নের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। খবর: বাসস।

জি-২০ জোটের সামনে ছয়টি প্রস্তাবও রেখেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতিকে (রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং কভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপট) বিবেচনায় নিয়ে একটি ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার এখনই উপযুক্ত সময়।’

সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানোয় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এ সম্মেলন বিশ্বজুড়ে তাদের সমকক্ষদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার এক অনন্য সুযোগ করে দেবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ গ্লোবাল সাউথের একটি দেশ এবং ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ ধারণার আওতায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য জি-২০-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানায়। ‘আসুন আমরা একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ এবং একটি উন্নত বিশ্বের জন্য একসঙ্গে কাজ করি’, যোগ করেন তিনি।

টেকসই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য তার প্রথম প্রস্তাবে তিনি বলেন, মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, একটি নতুন দৃষ্টান্ত প্রয়োজন, যা এসডিজির সমান্তরালে সামগ্রিকভাবে বৈষম্যকে মোকাবিলা করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃতীয়ত, স্বল্পোন্নত দেশ, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোসহ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য বিশেষ অর্থায়নের প্রয়োজন। তাদের উত্তরণের সময় এটি পূরণ করতে হবে। চতুর্থ প্রস্তাবে, তিনি নারীসহ সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে ‘ডিজিটাল ডিভাইডস’ সেতুবন্ধন রচনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিনিয়োগ করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা নেয়ার জন্য অর্থায়ন এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর সমর্থন অত্যাবশ্যক, তিনি যোগ করেন।

পঞ্চমত, তিনি বলেন, সব মানুষেরই ভালোভাবে জীবনযাপনের সমান অধিকার থাকা উচিত। তিনি বলেন, বৈশ্বিক সম্প্রদায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে যেন ভুলবেন না।

ষষ্ঠ প্রস্তাবে তিনি বলেন, বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সাউথ-সাউথ ও ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করুন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে অংশীদার, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাত, থিংক-ট্যাংক এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রায় পাঁচ দশক আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জি-২০ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ভারত সরকারকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান।

তিনি বলেন, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের বিষয়ে পরামর্শমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে জি-২০ প্লাটফর্মকে আরও অর্থবহ করার জন্য তার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিকে আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করি।’ তিনি ‘ভয়েস অব দ্য সাউথ সামিট’ আহ্বান করা এবং ‘মানবকেন্দ্রিক উন্নয়ন’ বিষয়ক উদ্বোধনী অধিবেশনে তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও অভিনন্দন জানান।

শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নের স্তম্ভ হিসেবে মানব উন্নয়নের প্রকৃত মূল্যে বিশ্বাস করে এবং এটা সরকারের নীতিতে প্রতিফলিত হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে সহযোগিতায় মানবকেন্দ্রিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য আপনার (মোদির) জোরালো উদ্যোগে অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক কভিড-১৯ মহামারি এবং নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। বিশ্বব্যাপী মন্দা এবং খাদ্য, জ্বালানি ও সারের সংকট জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে যুক্ত করে মানুষের জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য বৈশ্বিক পর্যায়ে সাহসী, দৃঢ় এবং সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজন।