রাজধানীতে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে না চলায় নগরবাসীকে প্রতিদিনই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নগরবাসীর প্রধান সমস্যা যানজট। বিশেষ করে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, বিপণিবিতান প্রভৃতি জায়গায় যাতায়াত করা দুঃস্বপ্নের যন্ত্রণার মতো। যানজটের কারণে প্রতিদিন যে কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, তার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৪০ কোটি টাকা। ২০২২ সালে রাজধানীর সড়কে প্রতিদিন ৮০ লাখের বেশি কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়েছে, যা ২০১৭ সালে ছিল দিনে ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা। বিশ্বের সবচেয়ে যানজটপূর্ণ শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান প্রথম দিকে। কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়া ছাড়াও গণপরিবহনে চলাচলে যাত্রীরা অনেক ধরনের সমস্যায় পড়েন। এ অবস্থায় মেট্রোরেল নগরবাসীর জন্য আশীর্বাদ হিসেবে এসেছে। যেখানে ঢাকা বিশ্বের অন্যতম ধীরগতির শহর, যেখানে সামান্যতম দূরত্ব অতিক্রম করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়, সেই শহরে মেট্রোরেলকে সাধারণ মানুষ সরকারের সর্বাপেক্ষা জনবান্ধব প্রকল্প বলেই আখ্যা দিয়ে ফেলেছেন এরই মধ্যে, যেন কত কাল অপেক্ষা করছিলেন মেট্রোরেলের জন্য! অনেকে তো বলছেন, আর কোনো প্রকল্প নেয়ার আগে রাজধানীতে আরও কয়েকটি রুটে মেট্রোরেল চালু করা উচিত। অথচ মেট্রোরেল প্রকল্প গ্রহণের পর এর রূপকল্প ও অভিকল্প নিয়ে ব্যঙ্গ করেছিলেন সাধারণ মানুষ। মেট্রোরেলের প্রতিপাদ্য হলোÑ‘বাঁচবে সময়, বাঁচবে পরিবেশ; যানজট কমাবে মেট্রোরেল।’ এবং এর লক্ষ্য হলো‘দ্রুতগামী, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, সময়সাশ্রয়ী, বিদ্যুৎচালিত ও পরিবেশবান্ধব অত্যাধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরী ও তৎসংলগ্ন পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসন।’ সরকারের অন্য সব প্রকল্পের মতো এটি নিয়ে সমালোচনা ছিল অনেক। এটি রাজধানীর যানজট ও অব্যবস্থাপনা বাড়বেÑএমন মন্তব্যও করেছেন অনেকে। কিন্তু মেট্রোরেল চাুল হতে না হতেই পরিবহন ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা শুরু হয়ে গেছে। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত হয়েছে মেট্রোরেল-সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিদ্যুৎ সরবরাহ কম থাকায় দুই ঘণ্টা বন্ধ ছিল মেট্রোরেল।’ প্রতিবেদনের তথ্য, ওভারহেড ক্যাটেনারি সিস্টেমে (ট্রেন চলাচলের ওপরের বৈদ্যুতিক লাইন) বিদ্যুৎ সরবরাহ কম থাকায় রোববার ১১০ মিনিট বন্ধ ছিল মেট্রোরেল চলাচল।
মেট্রোরেল আমাদের দেশে নতুন হওয়ায় সাময়িকভাবে বন্ধ থাকার জন্য হয়তো সমালোচনা করা ঠিক হবে না। কিন্তু এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে লক্ষ্যে মনোযোগ বাড়াতে হবে। কয়েক দিন আগে মেট্রোরেলের বিদ্যুতের লাইনের ওপর পাশের ভবন থেকে ডিশ লাইনের কেব্ল পড়ায় যান চলাচল বন্ধ রাখতে হয়েছে। এর আগে থার্টিফার্স্টের রাতে মেট্রোরেল লাইনের ওপর ফানুস পড়ে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে।
মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) চালু হওয়ার মেট্রোরেল চলাচলে এ পর্যন্ত এ তিনটি সমস্যা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। আপাতত এসব বিষয় সামনে রেখে সমস্যার সমাধান করতে হবে। ডিএমটিসিএল শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সরকার দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবেÑএটিই প্রত্যাশা।