Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 2:30 am

মেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনায় নিন

 

দেশের প্রথম এবং একমাত্র পরিবেশবান্ধব গণপরিবহন মেট্রোরেল রাজধানীর বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট এলাকার গণপরিবহনে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, মেট্রোরেলের কারণে অন্যান্য গণপরিবহন কমে গেলে এমনিতেই কমে যাবে শব্দ ও বায়ুদূষণ, কমবে যানজটও। মেট্রোরেলের মাধ্যম বাংলাদেশ প্রথম বিদ্যুৎচালিত রেল যোগাযোগব্যবস্থায় প্রবেশ করেছে। অনেকের ধারণা ছিল, মেট্রোরেল মূলত অভিজাত শ্রেণির জন্য, এটি সর্বজনীন হতে সময় লাগবে। সে অর্থে তেমন সময় লাগেনি; এরই মধ্যে সর্বজনীন হওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়েছে মেট্রোরেল। এখন মেট্রোরেলে উপচে পড়া ভিড় দেখে প্রতীয়মান হয় এটি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশিতই বটে।

শুক্রবার শেয়ার বিজে ‘মেট্রোরেলে টিকিটে ১৫% ভ্যাট দিতে হবে’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে জানা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভ্যাট মওকুফে অপারগতা প্রকাশ করায় আগামী ১ জুলাই থেকে এই ভ্যাট বসবে। বৃহস্পতিবার এনবিআর থেকে ভ্যাট অব্যাহতি বা মওকুফ করা হবে না মর্মে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে (ডিএমটিসিএল) চিঠি দিয়েছে এনবিআর। এনবিআর বলছে, মেট্রোরেলের টিকিট ও ব্যয় থেকে প্রতি বছর প্রায় ১০০ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় করা সম্ভব হবে। ভ্যাট সাধারণত ভোক্তাকেই দিতে হয়। তাই মেট্রোরেলের ভাড়া ১৫ শতাংশ বাড়তে পারে। মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে ভ্যাট মওকুফ রয়েছে, যার সময়সীমা আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত।

আবার গতকাল গণমাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল, ‘মেট্রোরেলের ভাড়ায় ভ্যাট আরোপের বিষয়টি সরকার জানে না’। শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘হঠাৎ কারা জুলাই থেকে মেট্রোরেলের ভাড়ায় ভ্যাট ১৫ শতাংশ বাড়বে বলে ঘোষণা দিল, এ সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। গণপরিবহনের একটি বিশেষ সেবাধর্মী পরিবহন মেট্রোরেল। … আর আমরা এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তও নিইনি।’

বোঝাই যাচ্ছে, মেট্রোরেলের ভাড়ায় মূসক আরোপের বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত নয়। তবে যেহেতু মূসক আরোপের কথা উঠেই গেছে, তাতে মনে হয় একসময় এটি আরোপ হবেই। দেশ এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনায় সরকারকে প্রতিনিয়ত অর্থের জোগান দিতে হচ্ছে। ওই মূলত আহরিত হচ্ছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের মাধ্যমে। বিভিন্ন লক্ষ্য সামনে রেখে সময়ে সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে। দেশের এলডিসি উত্তরণ এবং কর-জিডিপি অনুপাত কাক্সিক্ষত মাত্রায় উন্নীত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন খাতের সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে প্রদত্ত অব্যাহতি সুবিধা ক্রমান্বয়ে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তাই মেট্রোরেলেও প্রত্যাহার হবে। কিন্তু বিষয় হলো মেট্রোরেলের টিকিট ও ব্যয় থেকে প্রতি বছর প্রায় ১০০ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় করা সম্ভব হবে। এ পরিমাণ টাকা অন্য উৎস থেকেও আহরণ করা সম্ভব। এ টাকার জন্য সাধারণ মানুষকে বিড়ম্বনায় ফেলা সমীচীন হবে না। আর মেট্রোরেল আদৌ অভিজাত শ্রেণির যান নয়। তাই মেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনায় নিয়ে প্রাজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেই প্রত্যাশা।