নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৫০ টনের বেশি মেডিক্যাল বর্জ্য সৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ১৫ টন হচ্ছে নানা রকম রোগব্যাধিতে সংক্রামক। এগুলো ব্যবস্থাপনায় মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ২০০৮ সালের বিধিমালার আওতায় নানা উদ্যোগ নেওয়ার কথা থাকলেও তার বস্তবায়ন হচ্ছে না। বিধিমালায় প্রতিটি হাসপাতালে ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) স্থাপনের কথা রয়েছে। কিন্তু হাসপাতালগুলোয় ইটিপি নেই। এছাড়া জনগণ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও সচেতন নয়।
চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা গতকাল রোববার এসব কথা বলেন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং বেসরকারি সংস্থা প্রিজম
বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এ সেমিনার আয়োজন করে। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, গৃহস্থালির বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য ও শিল্প বর্জ্যরে পাশাপাশি মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোরই কাজ। অধিক জনসংখ্যার চাপে এ কাজ চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ছে। দেশে ওষুধশিল্প বিকাশের ফলে ১৯৯টি অ্যালোপ্যাথিক, ১৭২টি আয়ুর্বেদিক, ২৬৯টি ইউনানি, ২৯টি হারবাল ও ২৮টি হোমিওপ্যাথিকসহ মোট সাত শতাধিক কোম্পানি ওষুধ উৎপাদন করছে। এতে নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ, অণুজীব, ভারী পদার্থ ও দ্রব্যাদি ব্যবহƒত হয়। চিকিৎসাবর্জ্যরে মধ্যে অনেকাংশই মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আইন ও ব্যবস্থা অনুযায়ী এগুলো ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বিশেষ সচেতনতা প্রয়োজন।’
ঢাকা উত্তর সিটির প্যানেল মেয়র মো. ওসমান গনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মালেক, উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মেসবাহুল ইসলাম, দক্ষিণ সিটির সিইও খান মোহাম্মদ বিলাল প্রমুখ। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা সভায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, প্রিজম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন নানা সামাজিক কাজের পাশাপাশি মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কাজ করছে। সংস্থাটির ২০১২ সালের হিসাবমতে, রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ৫০ টন মেডিক্যাল বর্জ্য তৈরি হয়, যার মধ্যে প্রায় ১৫ টন ক্ষতিকারক। তবে বর্তমানে এ পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রিজমের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিপুল পরিমাণ এ বর্জ্যরে মধ্যে সামান্যই কার্যকর ব্যবস্থাপনা সম্ভব হচ্ছে। ২০০৮ সালে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণের বিধিমালা অনুসারে সব হাসপাতালে তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ইটিপি স্থাপনের কথা রয়েছে। কিন্তু হাসপাতালগুলোয় ইটিপি নেই বলে বক্তারা জানান।
তথ্যমতে, বিধিমালা অনুযায়ী হাসপাতালগুলোয় সৃষ্টি হওয়া বর্জ্যকে পাঁচটি আলাদা পাত্রে রাখার কথা। সাধারণ বর্জ্যরে জন্য কালো পাত্র (বিন), তরল বর্জ্যরে জন্য নীল বিন, সংক্রামক বর্জ্যরে জন্য হলুদ বিন, রিসাইকেলযোগ্য বর্জ্যরে জন্য সবুজ বিন এবং ধারালো বর্জ্যরে জন্য লাল বিন রাখার কথা। বেশ কিছু হাসপাতালে এসব বিন রাখা হলেও সেগুলোতে বর্জ্য আলাদা করে ফেলা হচ্ছে না। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হলে ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোকে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়ার কথা নয়। দেখা যাচ্ছে ৯০ শতাংশ বর্জ্যই সাধারণভাবে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে অগ্রগতি হচ্ছে না। ফলে এসব ক্ষতিকারক বর্জ্য খাদ্য ও পানিতে মিশে যাচ্ছে।
সভায় উপস্থিত মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, জনগণের সচেতনতা খুবই জরুরি। প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয়, যা দুই সিটি ব্যবস্থাপনা করছে। পাঁচ হাজার ৫৭টি ওয়েস্ট বিন দিয়েছি, তা অনেকে চুরি করে নিয়েছেন। অনেকে বিন নিয়ে ছাদে টব হিসেবে ব্যবহার করছেন। অনেকগুলো রাস্তায় চ্যাপ্টা হয়ে আছে। আমরা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের চাকরি দিয়েছি। দেখা যাচ্ছে অনেকে সময়মতো কাজ করেন না, ঘুমান। অনেকে নিজে কাজ না করে অর্ধেক বেতনে অন্যকে কাজে লাগাচ্ছেন। আবার বেতন নিতে হাজির হচ্ছেন। এসব বিষয় মোকাবিলায় আমরা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মোবাইল ট্র্যাকিং করার চেষ্টা করছি। আমরা প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যার সমাধান করছি, এখন জনগণকেও সচেতন হওয়া দরকার। মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা হাসপাতালগুলোকে বলছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে অনেকে বর্জ্যগুলো দিতে চান না। অনেকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ইনজেকশন, স্যালাইনের প্যাকেট পুনর্ব্যবহার করেন।
সেমিনারে উপস্থাপিত প্রিজম বাংলাদেশের তথ্যমতে, গত কয়েক বছর ধরে রাজধানীর ৭৫৩টি, সাভার পৌরসভার ৩২টি এবং যশোর পৌরসভার ৬০টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। এসব হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন সাত টন বর্জ্য সংগ্রহ করে তা দুটি অটোক্লেভিং মেশিনের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে।