নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন আসাদুজ্জামান রিপন, তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন। গতকাল বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছ থেকে মনোনয়ন ফরম কেনেন তারা।
রিপন ও তাবিথ উত্তর সিটি করপোরেশনের এবং ইশরাক দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রার্থী হতে চাইছেন। বিএনপির মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা শুক্রবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে। তার পরদিন দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় দুই সিটির মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। আগামী ৩০ জানুয়ারি রাজধানীর এই দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। প্রার্থী হতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা
দিতে হবে।
মনোনয়ন প্রার্থীদের মধ্যে রিপন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে বিএনপির বিশেষ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। তাবিথ বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর বড় ছেলে। তিনি উত্তর সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। আর ইশরাক দলের সদ্য প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার বড় ছেলে। খোকা অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ মেয়র ছিলেন।
উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রার্থী হতে ইচ্ছুক আসাদুজ্জামান রিপন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই নির্বাচন থেকে প্রত্যাশা করার কিছু নেই। দেশে অনেক আগে থেকে ভোট নির্বাসিত হয়ে গেছে, দেশে গণতন্ত্র নেই, ভোট নেই, সুষ্ঠুভাবে কোনো নির্বাচনও হয়নি; যা হয়েছে জোচ্চুরিভাবে নির্বাচন হয়েছে। এরপরও আমার পার্টি গণতন্ত্র রক্ষার জন্য এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না, এই নির্বাচনের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র উদ্ধার হবে। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এই নির্বাচনে হারলে আকাশ ভেঙে পড়বে না। আসলে আকাশ ভেঙে পড়বে তাদের (সরকার) মাথায়, সে জন্য সিটি নির্বাচন কোনোভাবে নিরপেক্ষ হোক, এটা তারা চাইবে না।’
তাহলে ভোটে অংশ নেওয়ার কারণ কীÑপ্রশ্নের উত্তরে রিপন বলেন, ‘অন্ততপক্ষে নির্বাচনে যদি প্রার্থী হই, ধানের শীষের ভোট দানের আহ্বানের সঙ্গে সঙ্গে নেত্রীর মুক্তির দাবিটা উচ্চকিত হবেÑসেই লক্ষ্য থেকে আমি এই নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। শুধু আমাদের নেত্রীর মুক্তির দাবিটি তুলে ধরার জন্য।’
তাবিথও জানান, আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চান। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, এবার একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ আমরা পাব। যদি আমরা সেই সুযোগ পাই, আশা করি আমরা জয়লাভ তো করবই এবং তখন জনগণের কল্যাণে আমরা কাজ করার সুযোগ পাব।’ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সিইসির প্রতি আহ্বান রাখেন গতবারের এই প্রার্থী।
তাবিথ বলেন, ‘আমি নিজেকে শুধু যোগ্য প্রার্থীই ভাবছি না, জনগণের প্রার্থীও ভাবছি। কারণ ২০১৫ সালের নির্বাচনে আপনারা পরিষ্কারভাবে দেখেছেন, জনগণের ব্যাপক সাড়া আমার প্রতি ছিল। কিন্তু ওই নির্বাচনটা বানচাল করে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। তাই আমি শুধু আশাবাদী নই, দেশবাসী এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ভোটাররা যদি সুযোগ পান, আমাকেই ভোট দেবেন।’
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ইশরাক বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছি বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ হিসেবে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কারামুক্ত করার জন্য এবং বাংলাদেশে ক্ষমতার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি। নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি থাকবে, তাদের যে সাংবিধানিক অধিকার দেওয়া হয়েছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য, তারা যাতে সেই পবিত্র দায়িত্বটা পালন করেন।’
জয়ের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি শতভাগ আশাবাদী। যদি একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে আমরা ধানের শীষের প্রার্থী যারা আছি, তারা বিপুল ভোটে জয়লাভ করব।’
ইভিএমে কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপির প্রার্থী হতে ইচ্ছুক তিনজনই। ইভিএম যারা পরিচালনা করবে, সেখানে দলীয় এজেন্ট রাখার বিধান করার দাবিও জানান তারা।