আতাউর রহমান: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বেসরকারি খাতের সাউথইস্ট ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ছিল গতকাল। সভায় মেয়াদ শেষ হওয়া পরিচালকদের নির্বাচন হলেও চেয়ারম্যানের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কারণ চেয়ারম্যানের এখনও মেয়াদ বাকি আছে। সেই সঙ্গে ব্যাংকটির পরবর্তী চেয়ারম্যান কে হচ্ছেন, সে বিষয়ে রয়েছে ব্যাংকপাড়ায় ব্যাপক আলোচনা। তাই ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যানের মেয়াদ এখনও বাকি আছে, সেই অজুহাত দেখিয়ে এজিএমে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, ১৮ বছর ধরে দায়িত্বপালনকারী আলমগীর কবির দৌড়ঝাঁপ করছেন চেয়ারটির দখল রাখতে। পাশাপাশি মিউচুয়াল গ্রুপের কর্ণধার আজিম উদ্দিন আহমেদ চেষ্টা করেছেন পদটি ফিরে পেতে। এছাড়া চলতি বছরে নতুন করে পর্ষদে থাকা চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদ চমক লাগাতে পারেন বলে জানা যায়। এ ত্রিমুখী লড়াইয়ের কারণে গতকাল এজিএমে পরিচালনা পর্ষদ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। সবার পক্ষ থেকেই চেষ্টা চলছে চেয়ানম্যান পদে আসার জন্য। কিন্তু কে বসবেন পদটিতে, কার বিষয়ে সুপারিশ বেশি এবং পরিচালনা পর্ষদের বেশিরভাগ কার পক্ষে। সে বিষয় নিয়ে মতভেদ থাকায় চেয়ারম্যান পদের নির্বাচনে আরও কিছু সময় নিতে চান পরিচালকরা। তাই পদটির বর্তমান চেয়ারম্যানের মেয়াদ থাকার কারণ দেখিয়ে এজিএমে নির্বাচন হয়নি বলে জানান অভিযোগকারীরা।
এ বিষয়ে জানতে ব্যাংকটির সচিবের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার জন্য ফোনকল করা হলে তিনি রিসিভ করেন না এবং কেটে দেন। তবে নাম না প্রকাশের শর্তে ব্যাংকটির এক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে জানান, গতকাল এজিএমে পরিচালকদের মধ্যে যারা পদত্যাগ করেছেন তারা শেয়ারহোল্ডারদের ভোটে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু চেয়ারম্যান নির্বাচন হয়নি। বর্তমান চেয়ারম্যানের মেয়াদ আরও ১-২ মাসের মতো রয়েছে। বর্তমান চেয়ারম্যান তার মেয়াদকালীন সময়ে থাকাবস্থায় পরবর্তী পর্ষদ সভায় চেয়ারম্যান নির্বাচন হবে। তবে সেটা কোনো সভায় বলা যাচ্ছে না, সেটা প্রথম সভায়ও হতে পারে আবার তার পরের কোনো সভায় হতে পারে। আশা করা যাচ্ছে ১ম-৩য় সভার মধ্যেই চেয়ারম্যান নির্বাচন হতে পারে।
উল্লেখ, আলমগীর কবির দীর্ঘ ১৮ বছর ব্যাংকটিতে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। এই ১৮ বছরে তিনি ব্যাংকটিতে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা করে ব্যাংকটির সম্মান ক্ষুণœ করেছেন। পাশাপাশি চেয়ারম্যান পদ টিকিয়ে রাখতে সব ধরনের কূটকৌশল পরিপালন করেছেন। যার কারণে ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের কয়েকজন এখন শৃঘরে। এসব কারণে ব্যাংকটি এখন দুর্বল অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে নতুন নেতৃত্বে ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় কাজ করছে একটি পক্ষ।
গতকাল ব্যাংকের ২৭তম (ভার্চুয়াল) ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সংযুক্ত শেয়ারহোল্ডারদের সর্বসম্মত ভোটে ৮ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ও ৪ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ এবং ২০২১ সালে সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদিত হয়।
ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বশেষ ২০২১ হিসাববছরে ব্যাংকটি মোট ১২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর মধ্যে ৮ শতাংশ নগদ ও ৪ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। সমাপ্ত হিসাববছরে ব্যাংকটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৫০ পয়সা; যা আগের বছরে ছিল ১ টাকা ৮১ পয়সা। সে হিসাবে কোম্পানিটির সমাপ্ত হিসাববছরে মুনাফা কমেছে। ব্যাংকটি আগের হিসাব বছরগুলোয় ২০২০ হিসাববছরে ১০ শতাংশ নগদ, ২০২১ হিসাববছরে সাড়ে ৭ শতাংশ নগদ ও আড়াই শতাংশ বোনাস এবং ২০১৮ হিসাববছরে শুধু ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল।
ব্যাংকটি ২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে ব্যাংকটির শেয়ার সংখ্যা ১১৮ কোটি ৮৯ লাখ ৪০ হাজার ৫২২টি। ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ১৮৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।