ক্রীড়া ডেস্ক: ৩৯৫ রান। টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে যে কোনো দলের জন্যই বড় পুঁজি। তার ওপর আবার যদি প্রতিপক্ষের ৫৯ রানে ৩ উইকেট নেয়া যায়, তাহলে তো কথাই নেই। অন্তত ম্যাচ হারের ভয় থাকে না। যে কারণে শনিবার দিন শেষে জয়ের স্বপ্নই বুনছিল বাংলাদেশ। কিন্তু রোববার ফিল্ডার, বোলারদের ব্যর্থতায় সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায় টাইগারদের। উল্টো তারা চট্টগ্রাম টেস্টে হেরেছে ৩ উইকেটে। এজন্য মুমিনুল হকের দল দায়ী করতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাইল মেয়ার্সকে। কেননা অভিষেকে তিনি যে করেছেন অবিশ্বাস্য ডাবল সেঞ্চুরি।
টেস্ট ইতিহাসের ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন মেয়ার্স। ২০০৩ সালের পর প্রথমবার কোনো ব্যাটসম্যান গড়েছেন এই কীর্তি। লরেন্স রোওয়ের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেকে ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন এ বাঁহাতি। ২১০ রানের অপরাজিত ইনিংসে ক্যারিবিয়ানদের স্বপ্নের জয় এনে দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের মাটিতে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩৯৫ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়তে হতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। শুধু কী তা-ই, টেস্ট ইতিহাসেও চতুর্থ ইনিংসে পঞ্চম সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের নজির গড়তে হতো ক্রেগ ব্রাফেটের দলকে। শেষ পর্যন্ত এ দুটি মাইলফলক গড়েই ম্যাচটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছে ৩ উইকেটে। মেয়ার্স ৩০৭ বলে ২০৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। এ হারে দুই টেস্টের সিরিজে ১০ পয়েন্ট ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ল বাংলাদেশ।
থায়ের চোটের কারণে দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে নিতে পারেননি সাকিব আল হাসান। যে কারণে চারজন বোলারদের ওপরই নির্ভর করতে হয় বাংলাদেশের। কিন্তু রোববার কোনো বোলারই উইকেট থেকে বাড়তি সাহায্য নিতে পারেনি। সে সুযোগে দারুণ ব্যাটিং করে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের চতুর্থ উইকেটের জুটি মেয়ার্স ও বর্নার। চা বিরতির পর বর্নার ফিরে গেলেও ক্যারিবীয়দের ঠিকই জিতেই ফিরেন মেয়ার্স। অভিষেকটা তিনি যে রাঙিয়েছেন মনের মতো করে তা বলায় যায়।
রোববার ৩ উইকেটে ১১০ রান নিয়ে খেলা শুরু করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের মেয়ার্স ও বর্নার। কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় সেশনে সফরকারীদের কোনো উইকেট নিতে পারেনি বাংলাদেশ। যে কারণে মানসিকভাবে এগিয়ে যায় ক্যারিবীয়রা। এরই মধ্যে চতুর্থ উইকেটে ৪৪২ বলে ২১৬ রানের অবিশ্বাস্য জুটি গড়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন মেয়ার্স ও বর্নার। এর আগে এ জুটি ভাঙার তিনটি পরিষ্কার সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। মেয়ার্সের ৪৭ রানে তাইজুল ইসলামের বলে জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। বাংলাদেশ নেয়নি রিভিউ। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল লাগছিল স্টাম্পে। মেয়ার্সই একটু পর জীবন পান ৪৯ রানে। মেহেদি হাসান মিরাজের বলে সিøপে ক্যাচ নিতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। যদিও সুযোগটি ছিল কঠিন। জীবন পাওয়ার বলেই মেয়ার্স পূরণ করেন ফিফটি।
আউট হতে পারতেন বর্নারও। নাঈম হাসানের একটি তীক্ষè টার্ন করা বল লাগে বর্নারের প্যাডে। এবারও রিভিউ নেয়নি বাংলাদেশ। বর্নার বেঁচে যান ২৫ রানে। শেষ সেশনে মেয়ার্সকে রান আউট করতে ব্যর্থ হন মুমিনুল। সে সুযোগে অভিষিক্ত এ ব্যাটসম্যান ৩০৩ বলে ২০ চার ও ৬ ছয়ে তুলে নেন ডাবল সেঞ্চুরি। এর আগে ১৭৮ বলে তিনি করেছিলেন সেঞ্চুরি।
সুযোগ নষ্টের কারণে প্রথম দুই সেশনেই চট্টগ্রাম টেস্টে হারের শঙ্কা জাগে বাংলাদেশের। তবে চা বিরতির পর বর্নারকে তাইজুল ইসলাম ও ব্ল্যাকউডকে ফিরিয়ে নাঈম হাসান কিছুটা আশার আলো জ্বালিয়ে ছিলেন। কিন্তু মেয়ার্সের সঙ্গে জশুয়া ডি সিলভার ১৩০ বলে ১০০ রানের জুটিতে হার নিশ্চিত হয়ে যায় টাইগারদের। জশুয়া (৫৯ বলে ২০) জয় এনে দেয়া পর্যন্ত উইকেটে থাকতে পারেননি। তাকে বোল্ড আউট করেন তাইজুল। তখন জয় থেকে ৩ রান দূরে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর কেমার রোচ (০) এসেও দাঁড়াতে পারেননি। তাতে অবশ্য ক্ষতি হয়নি ক্যারিবীয়দের। কিছুক্ষণের মধ্যেই জয়ের উল্লাসে মাতে তারা।
বাংলাদেশের হয়ে ১১৩ রানে ৩ উইকেট নেন মেহেদি হাসান মিরাজ। সর্বোচ্চ ৪৫ ওভার বল করা তাইজুল ৯১ রানে ২ উইকেট নেন। ৩৪ ওভারে ১০৪ রানে ১ উইকেট নাঈমের। ৭১ রানে দিয়ে উইকেটশূন্য মোস্তাফিজুর রহমান। অসাধারণ ব্যাটিংয়ের সুবাদে ম্যাচসেরা হয়েছেন মেয়ার্স। আগামী বৃহস্পতিবার সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ঢাকায় মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৩০
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ২৫৯
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ২২৩/৮
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: ৩৯৫/৭ (আগের দিন ১১০/৩) (বর্নার ৮৬, মেয়ার্স ২১০*, ব্ল্যাকউড ৯, জশুয়া ২০, রোচ ০; মোস্তাফিজ ১৩-১-৭১-০, তাইজুল ৩৪-১৭-৩৬-০, মিরাজ ৩৫-৩-১১৩-৪, নাঈম ৩৪-৪-১০৪-১)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ২ ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১-০তে এগিয়ে
ম্যাচ সেরা: কাইল মেয়ার্স