ঘাড়, পিঠ বা কোমরের ব্যথায় ভোগেননি, এমন মানুষের সংখ্যা কম। কোনো আঘাত পাওয়া ছাড়াই মেরুদণ্ডের এসব অংশে ব্যথা হতে পারে। মেরুদণ্ডে ব্যথার সঠিক কারণ নির্ণয় করা তাই জরুরি। তা না হলে একদিকে যেমন রোগীর কষ্ট বাড়তে থাকে, একইভাবে বাড়ে চিকিৎসার ব্যয়। তাই শুরু থেকেই সতর্কতা ও চিকিৎসা জরুরি।
মাথার খুলি থেকে প্রথম ৭টি হাড় বা কশেরুকা নিয়ে ঘাড়, পরবর্তী ১২টি হাড় নিয়ে পিঠ এবং এর নিচে ৫টি হাড় নিয়ে কোমর গঠিত। নানা কারণে মেরুদণ্ডে ব্যথার সৃষ্টি হয়। ব্যথার উৎপত্তিস্থল ও লক্ষণ প্রকাশের স্থান আলাদা হওয়ায় প্রায়ই সঠিক রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা ব্যাহত হয়।
লক্ষণ: মেরুদণ্ডের ওপরের অংশ আক্রান্ত হলে দাঁড়ানো বা বসা অবস্থায় ঘাড়ে ব্যথা অনুভূত হওয়া, ঘাড় থেকে উৎপন্ন ব্যথা হাতে ছড়িয়ে পড়া, প্রাথমিক পর্যায়ে কাঁধ ও হাতে ব্যথা, হাতের বিভিন্ন অংশে ঝিনঝিন করা, বোধশক্তি কমে আসা, পর্যায়ক্রমে অসাড়তা, ধীরে ধীরে হাত দুর্বল হয়ে হাতের কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়ার মতো সমস্যা হয়। পিঠের অংশে লক্ষণের মধ্যে রয়েছে বসা ও দাঁড়ানো অবস্থায় পিঠে ব্যথা এবং পিঠ থেকে বুকের চারপাশে ব্যথা ছড়িয়ে পড়া।
আর কোমরের দিকের মেরুদণ্ডে ব্যথার লক্ষণগুলো হলো দাঁড়ানো বা বসা অবস্থায় কোমরব্যথা অনুভূত হওয়া, কোমর থেকে উৎপন্ন ব্যথা পায়ে ছড়িয়ে পড়া, নিতম্ব ও পায়ের মাংসপেশিতে ব্যথা, পায়ের বিভিন্ন অংশে ঝিনঝিন-শিনশিন করা, পায়ের বোধশক্তি কমে আসা, পর্যায়ক্রমে পায়ের অসাড়তা, ধীরে ধীরে পা দুর্বল হয়ে কার্যক্ষমতা হারানো এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে পঙ্গুত্ব বরণ।
চিকিৎসা: মেরুদণ্ডের এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি ব্যথায় রোগী সাধারণত ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে উপশমের চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যথানাশক ওষুধ নিয়মিত ও দীর্ঘদিন খেলে কিডনিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। তাই ঘাড়, পিঠ ও কোমরব্যথায় অবহেলা না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। প্রয়োজন হলে অপারেশন বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ব্যথা নিরাময়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ফিজিওথেরাপি ও ব্যায়ামও প্রশমন দিতে পারে। আজকাল লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে মেরুদণ্ডের ব্যথা নিরাময়ের ব্যবস্থা করা হয়।
ডা. মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী, সিনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জন)
বিএলসিএস ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতাল, ঢাকা